ছোট গল্প



ছোট গল্প


গল্পের নামঃ এখনো সময় আছে।
.
- দোস্ত তোর এত বছরের কষ্ট আজ সফল হয়েছে। (শান্ত)
~ মানে? (রিয়াদ)
- তুই এতদিন যে বিষয় নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করেছিস। আজ তার ফলাফল বের হয়েছে। তুই সেই বিষয়ের উপর পিএইচডি করেছিস।
~ তোর মাথা ঠিক আছে? আমি তো এমন কোনো পরীক্ষা দেই নাই।
.
- গতকাল তুই যে ব্লাড টেস্ট করিয়েছিলি। এই নে তার রিপোর্ট।

.
শান্ত রিয়াদের হাতে রিপোর্ট কার্ড দিল। রিয়াদ রিপোর্ট কার্ড খুলে অবাক হয়ে যায়। নিজ চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছে না।
.
~ দেখেছিস, তোর এতদিনের কষ্ট আজ সফল হয়েছে।
.................... Read More







****************************************************************************



'তোমার পাহাড় ভালো লাগে, না সমুদ্র?'
- 'মরুভুমি'।
- 'তোমার নীল ভালো লাগে, না লাল?'
- 'কালো'।
- 'তোমার ভোর ভালো লাগে, না বিকেল?'
- 'রাত'।
- 'তোমার জোছনা ভালো লাগে, না শীত সকালের রোদ?'
- 'আগুন।'
- 'তোমার ঝর্ণা ভালো লাগে, না বৃষ্টি?'
- 'বন্যা।'
- 'তুমি এতো অদ্ভুত কেন বলতো?'
- 'কেন? অদ্ভুত হব কেন?'
- 'এই যে, একটা উত্তরও অপশন থেকে বেছে নাওনি।'
- 'আমার যা উত্তর ছিল, তা ওখানে ছিল না বলে'।
- 'কিন্তু তাই বলে অমন অদ্ভুত সব উত্তর'!
- 'আমিতো মিথ্যে বলি নি, তুমি মিথ্যে উত্তর চাও?'
- 'না, তা চাই না। কিন্তু তোমার 'প্রিয়'গুলো এতো অদ্ভুত কেন?'
- 'অদ্ভুত!'
- 'নয়তো কি? পাহাড়-সমুদ্র নয়, মরুভূমি প্রিয়। লাল-নীল নয়, প্রিয় রঙ কালো। জোছনা কিংবা শীত সকালের রোদও নয়, আগুন তোমার প্রিয়! এমনকি ঝর্ণা কিংবা বৃষ্টি নয়, তোমার ভালো লাগে বন্যা! অদ্ভুত নয়?'

- 'মরুভূমি প্রিয় বলে অবাক হও? অথচ দেখো, তুমি-আমি-আমরা কত কাছাকাছি, অথচ প্রয়োজনে তুমি নেই, আমি নেই, আমরা কোথাও নেই। যেন খাখা ধুধু মরুভূমি। তুমি-আমি-আমরা সকলেই ভীষণ একা, একা এবং একা।'
- ‘তাহলে কালো রঙ কিংবা রাত্রী কেন?’
- ‘দরজা বন্ধ করা গাড় অন্ধকারের কালো রঙে মুখ গুঁজে ওই একা আমি-তুমি-আমরা কাঁদি, মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে একা আমি-তুমি-আমাদের সঙ্গী হয় ঘুটঘুটে কালো অন্ধকার। আর কেউ নেই, কেউ থাকে না। জীবনানন্দ পর্যন্ত বলে গেছেন, ‘থাকে শুধু অন্ধকার...’। তখন অন্ধকারে মুখোমুখি বসবার জন্য বনলতা সেনরা থাকতো, এখন ‘থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার কেউ থাকে না’। অথচ, কালো রঙ কিংবা অন্ধকার রাত প্রিয় বলে ভড়কে যাও! অদ্ভুত!’
-‘কিন্তু আগুন?’
- ‘বুকের ভেতর জমা হওয়া যে অজস্র শ্রান্তিহীন আক্ষেপ আর কষ্টেরা দগদগে কয়লার ঝাঁঝালো আগুন, ও আগুন বুক পেতে সইতে হয়। জোছনা কিংবা রোদ, সেতো কাব্যের রঙ। রোমান্টিসিজম। হাহ! আর আগুনে পুড়তে হয়। আঁচ দিয়ে দেখো, সোনা কত খাঁটি? তাছাড়া আগুন কত কাজে লাগে, দেখো দিব্যি সিগারেট ধরানো যায়! নিকোটিনে থামে কিছু অন্য আগুন। আহা!’
- ‘কিন্তু তাই বলে বৃষ্টি নয়, ঝর্ণা নয়, বন্যা?’
- ‘হ্যা বন্যা! তুমুল বন্যা। চরাচর, লোকালয় ভেসে যাওয়া দুকুলপ্লাবী বন্যা। বেঁচে থাকতে শেষ অবধি এইতো চাই। বন্যা, একটা সর্বগ্রাসী বন্যা। ওই বন্যায় ভেসে যাবে আমি-তুমি-আমাদের মাঝে জেগে ওঠা অদৃশ্য সেই একলা মরুভূমি, গাড় কালো অন্ধকার রাত, বুকের গহীনে জ্বলা দাউদাউ আগুন। সব ভেসে যাবে বন্যায়। পলি পড়ে জেগে উঠবে নতুন স্বপন। অন্ধকারে উকি দিবে আগামী সকাল আর ধুধু মরুতে সবুজ ফসল। আগামী জীবন। জীবনের গান।‘
- ‘আর?’
- ‘দু’চোখের বন্যায় ভেসে যাবে বুকের গরল। আবার ঊঠবে জেগে মানুষের মৃতপ্রায় অজস্র মন। আর... আর, অন্ধকারে মুখোমুখি বসে রবে বনলতা সেন।‘

(লেখাটা আমার দারুন লেগেছে, তাই শেয়ার করলাম)

 --------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------
"অতঃপর সামান্য রোম্যান্স"
কলেজ লাইফের বন্ধু রিমি ও রিফাত।
কলেজের ১ম দিনই পরস্পরেরর
সাথে পরিচয় হয় উভয়ের।

কলেজের ১ম দিন।রিফাত লাল রঙের
একটা টি শার্ট পড়ে এসেছে।কাউকেই
চিনে না।সবকিছুর মাঝেই নতুনত্ব।

ক্লাসে ঢুকার পর একটা মেয়ের
উপস্থিতি রিফাতের নজর কাটে।মেয়েটার
নাম রিমি।দেখতে অসম্ভব সুন্দর।
তো,,প্রথম দিন ঠিক বাংলা সিনেমার মত
রিমিকে দেখতে দেখতে রিফাতের ক্লাস
অতিক্রমণ হয়।

কলেজের ২য় দিন...
রিফাতের মূল উদ্দেশ্য যে করেই হোক
রিমির সাথে সে কথা বলবেই।বারবার
অজুহাত খোঁজছে কিন্তু কোন সুযোগই
কাজে লাগাতে পারছে না।বেচেরা একটু মন
খারাপ করেই পেছনের বেঞ্চে বসে ছিল।

হঠাৎ তার বোধগম্য হল কেউ একজন
তাকে ডাকছে।মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই
সে অবাক হয়ে গেল।এত দেখছি মেঘ
না চাইতেই বৃষ্টি নামার অবস্থা।সেই
ব্যক্তিটা ছিল রিমি...

-জ্বি,আপনাকে,,শুনছেন?
-ইয়ে মানে,,হুম
-১০০ টাকা হবে?
-হুম,অবশ্যই,,এই নিন
-অদ্ভুত,তো!!
আপনি জানতে চাইলেন না,কেন আপনার
থেকে টাকা নিলাম??
-না,,
ও হ্যা,কেন নিলেন?
-আমরা ফার্স্ট ইয়ারের সবাই
মিলে একটা প্রোগ্রাম করব,এজন্য।
আগামীকাল কেন্টিনের সামনে চলে আসবেন
মনে করে।
-আচ্ছা ঠিকাছে

রিমি বেশি কিছু না বলে চলে গেল।আর
রিফাতের অবস্থা নাই বা বললাম (চোখ
টিপ্পনীর ইমু)।সে ভাবতেই পারছিল
না রিমি নিজে এসে তার
সাথে কথা বলবে(কারণে/ অকারণে যাই
হোক)কথা তো বলেছে!!

অতঃপর রিমি সঙ্গত রিফাতের বচন কার্য
বেশ ভালভাবেই সম্পাদিত হইল।

পরদিন যথাসময়ে কেন্টিনে চলে গেল
রিফাত।বড়সড় খাবারের আয়োজন
করা হয়েছে।আসলে কোন কারণ ছাড়াই
কলেজের সবাইকে পরস্পরের সাথে আলাপ
করিয়ে দেওয়ার জন্য এ আইডিয়াটা রিমিরই
ছিল।
খাওয়ার পর্ব শেষ।সবাই চলে যাচ্ছে।
সাথে রিমিও।

রিফাত বুঝতে পারছে না রিমির
সাথে আগবাড়িয়ে কথা বলাটা ঠিক
হবে কিনা।বুকে সাহস সঞ্চার
করে রিমিকে ডাক দিল রিফাত।
-রিমি...
(পেছনে ফিরে তাকাল রিমি।রিফাত
তাকে ডাকছে)
-জ্বি,বলুন
-আপনার নাম রিমি?
-আজীব তো,আপনি আমার নাম ধরে ডাকলেন
আর এখন বলছেন আমি রিমি কিনা?
-ও সরি
-মানে?
-না,কিছু না
-ডাকলেন কিজন্য?
-আপনার নাম রিমি কিনা সিউর হবার জন্য
-আচ্ছা,,হুম আমার নাম রিমি।আর কিছু
বলবেন?
একটু তাড়াতাড়ি বলেন,আমার
তাড়া আছে একটু।
-না,,না,,ঠিকাছে ,,আপনি যান...

রিমি চলে গেল সাথে রিফাতের মনে ২য়
বারের মত ক্রাশের সৃষ্টি করে দিয়ে গেল।

দিন যাচ্ছে তো যাচ্ছেই।রিফাত কিছুতেই
রিমির সাথে ভাব জমিয়ে উঠতে পারছিল
না।কিন্তু রিমি ততদিনে বুঝে গেছে রিফাত
যে তাকে পছন্দ করে।
(শত হোক,মেয়ে মানুষের মন বলে কথা।
তাদের মন ২,০০০০ ভোল্টের বাতির
মত পাওয়ারফুল।কে তার উপর কিভাবে নজর
দিচ্ছে এ ক্ষমতা মহান সৃষ্টিকর্তাই তাদের
দিয়ে দিয়েছেন)

রিমির সাথে ততটা ফ্রি না হলেও
মোটামুটি খারাপ ছিল না।তাই রিফাত
ভাবল যে করেই হোক
রিমিকে কথাটা বলতেই হবে।
একদিন একটা চিরকুট রিমির কাছে তার এক
ফ্রেন্ডের মাধ্যমে পৌঁছাল।রিমি ভেবেই
নিয়েছিল এটাতে লিখা আছে "I LOVE U
রিমি" কিন্তু
না,,এটাতে লিখা ছিল..."তোমার নাম
কি আসলেই রিমি??"

খানিকটা রাগান্বিত হয়েই রিফাতের
কাছে যায় রিমি।
-এটা কি?(রাগের ইমু)
-চিরকুট
-সেটা জানি,,,কি লেখা আছে এতে??
-তোমার নাম রিমি কিনা??
-কয়বার জিজ্ঞেস করলি কথাটা??
(রেগে যাওয়ায় সর্বনামের পরিবর্তন
হয়েছে)

এখন কি বলবে বুঝে উঠতে পারছিল
না রিফাত।সিচুয়েশান প্রতিকূলে।মারাত্মক ভয় পাচ্ছিল।
-ঠিক মনে হচ্ছে না
-এখন সরাসরি বল কি বলবি
-কি বলব?
-বলবি,আমাকে ভালবাসিস
-কেন বলব?
(রিফাত কিছুই বোঝতে পারছিল না তখন
কি করবে,,হতবিম্ব হয়ে গেছিল)
-কেন বলব মানে??
বলতে তোকে হবেই
-হুম,,"ভালবাসি"

কথাটা বলার সাথে সাথেই রিফাতের
গালে একটা কসিয়ে চড় মাড়ল রিমি
-মাড়লে কেন?
তুমি বলাতেই তো বলছি
-এখন শালা আরেকটা দিব
-কেন,কি করছি,আমি?
-আগে বললি না কেন?
-ভয়ে
-আমি বাঘ না ভাল্লুক যে ভয় পেতে হবে??
-কোন অংশে কম দেখছি না
-তবে রে....

দৌড় মানে,,কথাটা বলে আর জায়গায় ছিল
না রিফাত,,সে জানে আজ সে শেষ বোধহয়।
শেষ পর্যন্ত দৌড়ে ধরেই ফেলল
রিমি রিফাতকে..
-দাড়া,বলছি...
-পারলে দৌড়ে ধর আমাকে
-আর পারছি না দৌড়াতে
-কিছু করতে পারবে না কাছে আসলে
-না,,করব
-তাহলে আসছি না
-তুই আসবি? (রাগের ইমু)

রিফাত রিমির কাছে এসে বসল।আর
রিমি তখন নিজের ওষ্ঠের সামান্য
ছোঁয়া রিফাতের সাথে শেয়ার
করল...তারপর??
আর বলতে পারব না,পাবলিক প্লেস তো....
(ভেংচির ইমু)

[এটা ছিল রিফাতের শাস্তি,,কি মধুর এ
শাস্তি
দৌড় থেকে যদি হয় দারুণ কিছু,,দৌড়ই ভাল
]

(তন্ময়)

 --------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------


মৃন্ময় প্রস্থ্যান!
----------***
ডার্ক এভিল

অতঃপর...
দরোজার ওপাশ থেকে, আমার শুন্য শীতল চোখ দুটি
দরোজার কাঁচ ভেদ করে বার বার তোমায় দেখছিল। ওরা তোমায় সাদা কাপরে ঢেকে দিলো! বললো.... সব শেষ! আমার পৃথিবী শুন্যতায় ঢেকে গেলো।কি যে এক অসহনীয় ব্যাথায় বুকের পাঁজর গুলো নড়ে উঠলো! আমি ঠাঁয় দাড়িয়ে রইলাম।
আচ্ছা, শেষ বলে কি কিছু আছে! যেখানে শেষ, সেখানেই তো শুরু! তবে আমার শুরু কোথায়? আমি থমকে গিয়েছি। আটকা পরে গিয়েছি তোমার অভ্যাসে। শেষ দিকে, তোমার যাওয়ার আগে, যখন বার বার কাঁপা কাঁপা আহত স্বরে জানতে চাইতে, আমি খেয়েছি কিনা, সময় মত ঔষদ নিয়েছি কিনা, চাবি কোথায় রেখেছি...... কি যে এক অসহায়ত্বে আমার চোখ গড়িয়ে কষ্ট দানা বয়ে যেত! তোমার কষ্ট হবে জেনে, গলার ভিতর কান্না চেপে যেতাম! মৃন্ময়,তুমি আমার প্রয়োজন। তোমায় ছাড়া এক একটা দিন যেন বছর। রাত গুলো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। আমি ঘুমুতে পারিনা মৃন্ময়! রাতভর চোখের পাতায় ক্লান্তি নামে। ঘুম আসেনা। ঘুম কাতুরে চোখে তোমার অস্তিস্ত টের পাই। চারিদিকে, এদিক ওদিক তোমার ছায়া খুঁজি দিশেহারা হয়ে। পাইনা। অস্থির হয়ে উঠি। ঘর ছেড়ে বাহির হই। বাতাসে তোমার গন্দ্ব খুঁজি। দুর্বা ঘাঁশের শিশির কনায় ছুঁয়ে দেখি! এই তো এখানে তুমি কত শহস্র বার হাত দিয়ে ছুয়ে গেছো। সবুজের গায়ে এখনো তোমার অস্তিত্ব টের পাই। মৃন্ময়........ ফিরে আসো না! তোমায় আমার বড় প্রয়োজন। একবার আসো। তোমায় শর্ষে ইলিশ রেঁধে খাওয়াবো। পায়েস রাধবো। বিচ্ছিরি পায়ের নখ বলে আর জ্বালাবো না। দেখো তোমার জন্য আংগুলে সুঁই খুটে খুটে নকঁশী কাঁথা করেছি! তুমি এক কাঁথায় আজ কতদিন ঘুমুচ্ছিলে! আসো না মৃন্ময়! তোমায় ছাড়া আমার চলে না। এই দেখো কাল ঔষদ নিতে ভুলে গেছি। চাবিটা খুঁজে পাইনা। একটিবার ফিরে আসো। এই জনমে তোমায় এত ভালবাসবো যে তুমার সাত জনম পুষিয়ে দেবো। তোমায় নিয়ে আমার বুঁনা ২১ টা স্বপের একটাও পুরন করা হইনি। একবার আমার চোখের পাতায় তোমার যাদুর স্পর্শ দিয়ে যাও। আমার ঘুম হয়না। আমি ঘুমুবো মৃন্ময়! বার বার তোমার ব্যাথাতুর মুখটি চোখে ভাঁশে। ঘুমুলেই তুমি অদৃশ্য হয়ে যাও। তাইতো ঘুমাই না। জেগে থাকি অষ্টপ্রহর! এক মুহুর্ত তোমায় আড়াল করতে ইচ্ছে হয়না। তোমার অসহায়ত্ব আমায় পীড়া দেয়না। আমার অসহায়ত্ব তোমায় কতটা কষ্ট দিচ্ছিলো, তাই ভাবি। ভেবে ভেবে আবারো ক্লান্তি নামে চোখের পাতায়! মৃন্ময়, আবার দেখা হবে। শেষ বলে যদি সত্যিই কিছু না থাকে, তবে আবারো দেখা হবে। এক জনমে নয়, সাত জনমের শেষ দিন! এপারে নয়, তো ওপারে। সেদিন আর ভুল হবেনা। সেদিন আর যেতে দেবোনা। বেধে রাখবো। ভালবাসার সুঁতোয় শক্ত করে বিশ্বাসের দেওয়ালে মমতার পেড়েক ঠুকে গেঁথে রাখবো! একটি বার ফিরে আসো! তোমায় ছাড়া মৃত্যুও যেন দুর্বোধ্য গদ্যের মত স্পর্শের বাইরে! একবার শুধু ছুঁয়ে দাও মৃন্ময়... তারপর মরে যাই..........!
 --------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------

অপেক্ষা
অপেক্ষার সাথে সন্ধি আজ অরনীর বহু দিনের,তাই আজ অব্দি অপেক্ষা আর তাকে ছাড়ল না l   এর শুধু শুরুই আছে শেষ আর নেই...তাই আজও রাতগুলো অরনীর কাছে আগের মতই বেমানান l দিনের বেলাটা কাটে যেমন তেমন কিন্তু রাতটা গোলমাল করে দেয়.. চোখের পাতা লেগেও যায় কিন্তু সেও বহু কষ্টে l সারা রাত সেই পুরনো নাম্বারটায় সংযোগ পাওয়ার বৃথা চেষ্টা l অথচ একদিন ছিল যখন এই বন্ধ নাম্বারটি থেকে সহস্রাধিক কল এসে ব্যাটারি ডাউন করে দিত আর অরণী মিছা-মিছি রাগ ঝারত অরন্যর উপর l আজ যেন অরন্যর কিছুই যায় আসে না l আজ তাই অরণী মিছা-মিছি রাগ ঝরার চেষ্টাও করে না l করে কেবল ই অপেক্ষা.. যার শেষ কোথায় অরণী নিজেও জানে না..সেই বিকেলটার কথা আজও মনে আছে অরনীর..কি করে ভুলে যাবে? ওর জীবনে এমন আনন্দের দিন যে খুব কম ই এসেছে l সেদিন বিকেলটা অতবেশি সুন্দর ছিল না, আকাশটা নীল ছিল না l কিন্তু হাওয়াটা ভিশন মায়াবী ছিল l অরণ্য জানালো ছুটি পেয়ে গেছে l আর দুই মাসের অপেক্ষা.. এসেই অরনীকে সারাজীবনের সঙ্গী করে নিবে l এর চেয়ে বেশি আনন্দ কোনো দিন হয়নি অরনীর l মনে হচ্ছিল আকাশের টুকরো মেঘ গুলো ওর চুলে খেলে যাচ্ছে, কেমন একটা ভালোলাগায় মনটা শীতল হয়ে এলো l দুফোটা অশ্রুও গড়িয়ে এলো l অরণী শুধু জানতে চেয়েছিল সত্যি কিনা?.. এর পরের দুটা মাস যে কিভাবে গেল সেটা শুধু অরণী ই জানে,সেকেন্ডগুলো ঘন্টায় পরিনিত হলো,দিনগুলো বছরে, সময় যেন আর ফুরায় না l কত্ত প্ল্যানিং আর কত্ত কি..ছুটি শেষের ২ দিন আগে অরণ্য জানালো ছুটি ৮ দিন পিছিয়ে গেছে l কেমন যেন একটা ধাক্কার মত লাগলো অরনীর l তবু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল কোনো ব্যাপারনা l তবে সেদিনই অরনীর মনে হচ্ছিল কিছু একটা হবে যেটা অরণী কখনই চায়নি l তবু আশায় বুক বাধা l ৪ দিন যাওয়ার পর অরণ্য যা বলল.. অরণী আর কিছুই ভাবতে পারছিল না, অরন্যর প্রমোশন হয়ে যায় আর তাই অরনীকে কিছু না জানিয়েই রাজি হয়ে যায় সে আর জয়েন করে .. যা হবার তাই হয়.. ছুটিটা ক্যানসেল হয়ে যায়.. আর তার সাথে ক্যানসেল হয়ে যায় সব কিছু l জীবনটা যেন আটকে যায় l শেষ হয়ে যায় ভালো থাকার ক্ষমতা .. থেকে যায় কিছু সান্তনা.. আর প্রতিরাতে বেড়ে যায় অসম্ভব কিছু দীর্ঘ্যশ্বাস.. বদলে যায় অরণ্য আর বদলে যায় অরণীর মায়াবী বিকেলগুলো.. তবু অরণী অপেক্ষায় থাকে l যদি কোনো দিন অরণ্য সত্যি চলে আসে .. [ডায়রির পাতা থেকে]




 --------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------


 অসাধারণ একটি ভালোবাসার
গল্প..পড়ে দেখার অনুরোধ রইল..
Girlফ্রেন্ড : আমাকে কেন পছন্দ করো?
Boyফ্রেন্ডঃ কোন কারন নাই!!
Girl ফ্রেন্ড এটা পছন্দ করল না আর বলল
"না আমাকে কারন বল"
Boyফ্রেন্ডঃ ঠিক আছে, .."তুমি খুব সুন্দর,
Caring আর
আকর্ষণীয়"তাই.
Girlফ্রেন্ড খুব খুশি হল এইটা শুনে ;
........এর কিছুদিন পর মেয়েটি অসুস্থ
হয়ে গেল অসুখের কারনে লাবণ্য
হারিয়ে শুকনো ঝরা পাতার মত
হয়ে গেল !!
তখন সে তার

Boyফ্রেন্ড কে বললঃ তুমি কি এখনও
আমাকে ভালবাসো??
ছেলেঃএখন তো তুমি দেখতে সুন্দর
না তাহলে বল
তোমাকে ভালবাসার আমার
কি কারন থাকতে পারে !!!
মেয়েটি তারপর কাঁদতে শুরু করলো...:(:
( তখন ছেলে মেয়ের হাত
জড়িয়ে ধরে বলল..."ভালবাসতে
কোনো কারন লাগেনা ;
আমি তোমাকে ভালোবাসি আর
আজীবন ভালবেসে যাব যাই ঘটুক
না কেন"!!
[Moral: "ভালবাসার কারন
খুজতে না গিয়ে এর মধ্যকার
আবেগটাকে খুঁজে বের করুন জীবন
হবে অনেক সুন্দর"]


 --------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------

_____মিষ্টি প্রেম_____
- সকালের ঠান্ডা হাওয়ায় ঘুম ভেঙে যায়
কাব্যের..পাখিরা ডাকছে চারদিকে..বেল্কু
নিতে দাড়িয়ে আকাশ দেখছে কাব্য..নীল
আকাশের মাঝে টুকরো টুকরো সাদা মেঘ..
- সকাল 7.00।ক্লাসে যেতে হবে।
- কাব্য ফ্রেস হবার জন্য ওয়াস রুমে ঢুকল।
- টেবিলে খাবার সাজান আছে।কাব্যের
মা প্রতিদিন ওর জন্য খাবার রেডি করে রাখে।
নয়ত তারাহুরা করে করে আর খাবার না খেয়েই
চলে যাবে।মায়ের মন বলে কথা।
- কাব্য নাস্তা করে ভার্সিটির উদ্দেশ্য
রওনা হল।
- বাসা থেকে ভার্সিটি যেতে কাব্যের
৪৫মিনিট সময় লাগে।
- কাব্য ক্লাসে ঢুকতেই ওর দুই বন্ধু এসে বলল
আজ তোর
কপালে মনে হয় দু:খ আছে অনেক।কনা অনেক্ষন
যাবত
তোর জন্য ওয়েট করছে।
- কাব্য মাথায় হাত দিয়ে ক্লাস
থেকে বেরিয়ে পরল।কেন..আজ কি ওদের
ঘুরতে যাবার কথা ছিল?
- মনে পরছে না কিছুই।কিন্তু এখন কপালে এখন
কি আছে কে জানে?
- অনেকটা ভয়ের সাথে কাব্য কনার কাছে গেল।
- কনা হল কাব্যের স্বপ্ন পরী..পরীর মত সুন্দর
না হলেও
পরীর মতই তার মন..চোখ দুটো নীল আকাশের
মত..
- আমার পরীটা কি রাগ করেছে,বলেই হাতটা ধরল
কাব্য।
- এই হাত ছার।তুমি আমার হাত ধরবা না।
তোমাকে আজ আসতে বলছে কে।তুমি বাসায়
গিয়ে ঘুমাও।
- কাব্য অবস্থা খারাপ ভেবে হাত ছেরে দিল।
নইলে মাইর খাবার আশংকা আছে।
- কাব্য চিন্তায় পরল?কি করে রাজ কন্যার রাগ
ভাঙান যায়?
- এই শোন না,আমার ভুল হয়ে গেছে আর কখনও
দেরি হবে না।
- তুমি যাও এখান থেকে।আমার সাথে আর
কথা বলবা না।
- কাব্য এবার ব্যার্থ রাজ কন্যার রাগ ভাঙাতে।
ব্যার্থ হয়ে উঠে যাচ্ছে কাব্য এমন সময় কনার
হুংকার..
- এই গাধা কই যাও?
- তুমি না বললে চলে যেতে।
- এখন চুপচাপ দাড়িয়ে থাক।দেরি করে আসছ
আবার
ভাব নেওয়া হচ্ছে।চুপচাপ দাড়াইয়া থাকবা।একটুও
নড়বা না।
- কাব্য বাধ্য ছেলের মত দাড়িয়ে রইল আর
ভাবতে থাকল আজ কি আরও তারাতারি আসার
কথা ছিল.?
- কনা কাব্যের দিকে একবার তাকিয়ে আবার
মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল।মুখটা বিষন্ন
হয়ে গেছে।
- কাব্য পকেট থেকে একটা সূর্যমুখী ফুল বের
করে কনার দিকে বাড়িয়ে দিল।
- কনা ফুলের দিকে তাকিয়ে বলল,এইটা কি.?
- ফুল...ভালবাসার ফুল..
- এইটা দিয়ে আমি কি করব?
- তুমি তোমার কাছে রেখে দাও।
ভালবাসা বরবে তাহলে..
- আমার ভালবাসার দরকার নাই।তুমি রাখ..
- তোমার জন্য নিয়ে এসেছিলাম আর
আমি রেখে দেব.?
- কনা একটু রেগে গিয়ে বলল..অন্য কাউকে দেও
আমার লাগবে না..
- কাব্যের মনটা খারাপ হয়ে গেল।সামান্য
দেরি হয়েছে তাই এমন করবে..?তুমি থাক
আমি তাহলে চলে যাচ্ছি..
- কনার মাথা এবার আরও খারাপ হয়ে গেছে..এই
খবরদার এক পা সামনে বাড়ালে খুন
করে ফেলব..চুপচাপ আমার পাশে বস..
- কাব্য মাথা নিচু করে বসে পরল..
- কিছুক্ষন পর কনা একটা গিফট বের
করে কাব্যকে দিয়ে বলল....happy birthday
to u may dear
লুতুপুতু..
- কাব্য অবাক.!আজ আমার জন্মদিন..!অথচ
আমার
নিজেরই মনে নেই..
- কনা আলত করে চুমু দেয় কাব্যকে..এবার মন
ভাল
হয়েছে..?
- কাব্যও ছোট্ট করে একটা চুমু দিয়ে বলে আজকের
দিনের মত যেন প্রতিটা দিন আমার এমন
হয়..আমার
রাজকন্যা আমার সব..
- ইস..!সখ কত..?তাইবলে কি প্রতিদিন তোমার
জন্মদিন হবে নাকি..
- হ্যা..এই মিষ্টি গিফটের জন্য আমি প্রতিদিন
আমার জন্মদিন পালন করব..
- হ্যাঁ..তাহলে আর বড় হবার দরকার নাই..ছোট্ট
বাবু
হয়ে থাক..
- এই ভিফটের জন্য আমি সারা জীবন বাবু
হয়ে থাকতেও রাজি..এই আরেক বার দেও
না..প্লিজ.
- যাহ..দুষ্ট কোথাকার..
- আমি ত দুষ্টই তোমার জন্য..
- হুম..কনা কাব্যের ঘাড়ে মাথা রেখে চোখ বন্ধ
করে..
এভাবেই চলতে থাকে এক জোড়া মুক্ত পাখির
ভালবার গল্প...

 --------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------

...."জ্বি এফ".....
সকাল ৯টা বাজে।কুম্ভকর্ণে র মত নাক
ডেকে ঘুমুচ্ছিলাম।গতকাল রাত ৩টা পর্যন্ত
নীলার সাথে চ্যাটিং করি।ইচ্ছে ছিল সারারাত
জেগে থাকব।নীলার জন্য পারা যায়??

নীলা,,খুব অদ্ভুত একটা মেয়ে আর সেই রাম
লেভেলের বদমেজাজী।তাও খুব ভালবাসি মেয়েটাকে।
তখন রাত ৩টা বেজে ১মিনিট।নীলার মেসেজ....
-যাও,ঘুমাতে যাও
-না,আরেকটু।
-আজ আর হবে না
-প্লিজ
-ওই,তোমার না কালকে এক্সাম আছে??
-আগে তুমি,তারপর এক্সাম
-তুই গেলি?
খুব ভয় পাই ওকে।আর ও একবার
রেগে গেলে মিনিমাম ৩ দিন কন্টাক্ট অফ।যা ওর
পক্ষে সম্ভব হলেও আমার দ্বারা অসম্ভব।তাই
বাধ্য হয়েই ওই দিনের মত ফেবু থেকে বের
হয়ে যাই।জি এফ এর আদেশ বলে কথা।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং।নীলার ফোন...
-এতক্ষণ লাগে ফোন ধরতে?
-না,মানে,পড়তে বসছিলাম তো,তাই আর কি(ভেংচির
ইমু হবে)
-পড়তে বসছো না ছাই,,,
কয়টা বাজে খেয়াল আছে?
-৬টা বোধ হয়
-তোমার মাথা।এখন সাড়ে ৯টা বাজে।তোমার
এক্সাম ১০টায়।
-এক্সাম দিবো না
-কেন????
-তোমার সাথে কথা বলব
-পাগল??
-হুম তোমার জন্য
-যাই হোক,ঢাবিতে কিন্তু চান্স পেতেই হবে।
-আমি গেলাম,,লেট হয়ে যাচ্ছে
-হুম,,ভালবাসি,, রাখি
আজ যেহেতু নীলার মুখ
থেকে ভালবাসি কথাটা শুনেছি,নিউটনের ৩য়
সূত্রানুসারে আমার পরীক্ষা অবশ্যই ভাল হবে।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবলাম,,কি আছে আমার?
কিছুই তো নেই।সামান্য একটা হোস্টেলে থাকি।
কয়েকটা টিউশনির উপর নির্ভর করে দিন যাপন
করি।নীলা মেয়েটির তেমন কোন আহামরি চাহিদাও
নেই।কোনদিন আমার কাছে কিছু চায়ও না।
সে জানে তাকে দেওয়ার মত কোন সামর্থ্য নেই
আমার,তাই হয়ত বা মুখ ফুটে কিছু বলে না।
না,,আমাকে চান্স পেতেই হবে।দৃঢ় মনোবল
নিয়ে হলে প্রবেশ করলাম।প্রশ্নপত্ র পাওয়ার
পর......
কি আর বলব
যাই হোক কোন রকম পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের
হলাম।
বাসায় পৌঁছতে না পৌঁছতেই নীলা ফোন দিল।
তারপর আর কি,,একটার পর একটা প্রশ্ন
করতে লাগল।আর
আমি হুম,না,হুম,না ব্লা ব্লা বলতে থাকলাম।
কিছুদিন পর।
আজকে রেজাল্ট দিবে।
দেরি না করে বেরিয়ে পরি রেজাল্ট আনার জন্য।
তারপর,,আমি যা শুনলাম,,যাস্ট কোডন্ট বিলিভ
দ্যাট।আমি চান্স পেয়ে গেছি।আমার আনন্দ আর
ধরে কে!!!!
কি ভাবছেন??
চান্স পাইছি বলে আনন্দ?? উহু,,নীলার
কথা রাখতে পেরেছি।আমি জানি এই
খবরটা শুনে ওর থেকে বেশী কেউ খুশি হবে না।
তাড়াতাড়ি রিক্সায় উঠে নীলার বাসার
উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম
পরিহাস,,নীলাদের বাসার
বদলে আমি গিয়ে পৌঁছলাম হাসপাতালে।রাস্ত া পার
হওয়ার সময় একটা ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে ঞ্জান
হারিয়ে ফেলি।ঞ্জান ফিরতেই
দেখি আমি হাসপাতালে।সামনে নীলা বসে আছে।
-আমি চান্স পেয়েছি নীলা
-থাপ্পর খাবি,হারামি?
-কেন,আমি আবার কি করলাম??
আমি ভাবলাম আমার চান্স পাওয়ার কথা ও হয়ত
বিশ্বাস করছে না।তাই আমার উপর রেগে গেছে।
কিন্তু না....
-দেখে শুনে রাস্তা পার হতে পারিস না,কানা নাকি?
তোর যদি আজ কিছু একটা হয়ে যেত তাহলে আমার
কি হত,হু?
-কি হত আবার আরেকটা ছেলের
সাথে বিয়ে হয়ে যেত
-এতই সোজা?
-আর কোনদিন যদি এই রকম করিস,তাহলে তোর
খবর আছে(রাগের ইমু হবে,তাই
তুমি থেকে সোজা তুই)
-হি হি হি
-তবে রে.....
বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু
করে দিল পাগলিটা..আর আমিও.......
[সম্পূর্ণই কাল্পনিক]
by:শঙ্খনীল কারাগার


 --------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------

অন্তরালের অভিনয়
-সাবিহা বিনতে রইস


দ্রুত গতিতে ছুটে চলা ট্রেনের খোলা জানালার পাশে বসেও ঘেমে উঠেছে অরণী।তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোটা স্পষ্ট।একটু কান পাতলেই সব কিছু ছাপিয়ে নিজের হৃদপিন্ডের স্পন্দনটাও পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে সে।তবুও নিজেকে যত টা সম্ভব শান্ত রেখেছে অরণী।তখনও তার চোখ জানালার বাইরে।
সে প্রাণপন চেষ্টা করছে তার বিপরীতে বসা মানুষটার দিকে না তাকাতে।কিন্তু কি এক অজানা আকাঙ্খায় বার বার আড় চোখে দৃষ্টি দিচ্ছে মানুষটির দিকে।

তার বিপরীতে বসা মানুষটির মুখ দেখা যাচ্ছে না।সামনে ধরে রাখা খবরের কাগজে নিজে প্রায় সমস্তই আড়াল করে ফেলেছে।কিন্তু চোখ দুটি তখনও স্পষ্ট।
আর সেই চোখের দিকে চোখ পড়তেই ধড়াশ করে ওঠে অরণীর বুকের ভেতর।

একটি মায়া কাড়া চোখ,পরিচিত মুখ, সেই ক্যাম্পাস,,ক্লা
স ফাঁকি দিয়ে হাত ধরে ঘুরে বেড়ানো,আর অজস্র খুনসুটি ভরা দৃশ্য গুলো ফ্লাসব্যাকের মত মনের মাঝে উঁকি দিতে থাকে তার।
হঠাত্ মনে উঁকি দেওয়া স্মৃতি গুলো হারিয়ে ফেলার ভয়ে দ্রুত চোখ বন্ধ করে ফেলে অরণী।মনে হয় এভাবেই কাটিয়ে দিতে পারবে সে সারাজীবন



পরিচিত একটা কন্ঠের ডাকে ঘোর ভাঙে অরণীর।চোখ খোলা মাত্রই সামনের মানুষটি স্পষ্ট হয়।এখন আর কোন প্রতিবন্ধকতা তাকে আড়াল করে নেই!
বহুদিনে সেই চিরচেনা মুখ আবার কখনও দেখতে পাবে,,সময়ের পরিবর্তনে এটা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো অরণী।অদ্ভূত একটা অনুভূতি আরষ্ট করে ফেলে তাকে,,যার ব্যাখ্যা জানা নেই তার!

" কেমন আছো? "
নিজেই আগে প্রশ্ন করে নিলয়।
-হুম,ভালো....তুমি?
অনেকটা জোর করেই কথা বলে অরণী।
-এই তো,,চলে যাচ্ছে!
বলেই ঠোটের কোনে কিঞ্চিত্ হাসি ফুটিয়ে তোলে নিলয়।
তারপর বেশ কিছুক্ষন দুইজনেই চুপ।
নিরবতা ভেঙে নিলয়ই আবার কথা বলে।
-তোমার মেয়ে নাকি?
নিলয় তখন অরণীর কোলে ঘুমিয়ে থাকা ২বছরের ছোট্র বাবুটার দিকে তাকিয়ে আছে,,অরণীও স্পর্শর দিকে তাকায়।কিছুক্ষনের জন্য অরণী তার কোলে ঘুমিয়ে থাকা ছোট্র স্পর্শের অস্তিত্ব ভুলেই গিয়েছিলো।

অরণীকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার কথা বলে নিলয়,,
-বিয়েটা করেছো তাহলে?
হঠাত্ করে অরণীর মাথায় পুরোনো রাগটা চেপে বসে আবার,
জোর গলায় বলে,
-হ্যা করেছি!আর অনেক সুখে আছি আমি আমার এই জীবনে।যেখানে আমাকে কষ্ট দেওয়ার মত কেউ নেই!আমাকে ভুল বোঝার মত,অবিশ্বাস করার মত কেউ নেই!
-তাহলে তুমি স্বীকার করছো অরণী,সেদিন আমি ঠিক ছিলাম।আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা মিথ্যে ছিলো..শুধু দূর্বলতা মাত্র,তাইতো?
নিলয়ের কথা গুলো ছুরির মত অরণীর বুকে এসে বিধেঁ,কিছু একটা বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়।প্রবল বেগে ছাপিয়ে ওঠা কান্নাটাকে অতি কষ্টে নিয়ন্ত্রন করে নিজের ভেতর।
তারপর ধীর গলায় বলে,
-তুমিও তো অর্পিতাকে নিয়ে ভালো আছো,তাহলে আজ আর এইসব বলে লাভ কি?
-হুম..ভালো আছি।অনেক ভালো...

ট্রেন তখন স্টেশনে এসে পৌছেছে।নিলয় উঠে পড়ে।তার গন্তব্যে চলে এসেছে।স্থির ভাবে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে কিছু না বলেই ট্রেন থেকে নেমে পড়ে সে।
আর তার চলার পথের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অরণী।



-কি হয়েছে তোর?এইরকম দেখাচ্ছে কেন তোকে?
আফসানার কথায় চমকে ওঠে অরণী।

-নাহ,তেমন কিছু না

-ওই যে কয়েক টা সিট পেছনেই বসা মেয়েটি তনিমা,আমার সেই ছোট্র বেলার বন্ধু।হঠাত্ ওর সাথে দেখা হয়ে গেলো,তাই একটু দেরি করে ফেলেছি।
বাবু কি তোকে খুব জ্বালিয়েছে?
আফসানা জিজ্ঞাসা করে অরণীকে!

-নাহ আপু...আমাদের স্পর্শ তো লক্ষী একটা মেয়ে।ও কি কাউকে জ্বালাতে পারে?

অরণী ছোট্র স্পর্শকে আফসানার কোলে দেয়।অরণীর বড় বোন আফসানার মেয়ে স্পর্শ।আরণীর একা জীবনের দিশা এই মেয়েটি।

একটি ছোট্র ভুল বোঝাবোঝির জন্য নিলয়ের সাথে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর আর কখনই কাউকে নিয়ে ভাবতে পারেনি অরণী।তাই এতবছর পরেও আজও সে একা।

একটা দীর্ঘনিশ্বাষ ফেলে আরণী।
মনে মনে বলে সেদিনও আমাকে বোঝোনি তুমি নিলয়,আর আজও বুঝলে না।
মনের গহীনে থাকা তীব্র যন্ত্রনায় আবার ভিজে ওঠে অরণীর চোখের পাতা...অতি সন্তর্পনে আড়াল করে সে জমে ওঠা দু ফোটা অশ্রুকে



এক মনে হাঁটছে নিলয়।এত বছর পর হঠাত্ অরণী আবার তার সামনে আসবে এটা কল্পনার বাইরে ছিলো নিলয়ের।
সেই একইরকম জেদী আছে মেয়েটি!পরিবর্তন হয়নি মোটেও!
যাক তবুও সুখে তো আছে।তার মত একা তো আর থাকতে হয়নি অরণীকে।
মনে মনে ভাবে নিলয়।
নিলয়ের সাথে অর্পিতার বিয়েটা শেষ মূহুর্তে ভেঙে যায়।নিলয় বুঝেছিলো অরণী ছাড়া আর কাউকে আর জীবনে স্থান দেওয়া সম্ভব না।তাই অর্পিতাকে না বলে দিয়েছিলো।
শেষ খবরটা অনেকেই পাইনি।তাই আজও অরণীর মনে অর্পিতা আর নিলয় সম্পর্কটা বদ্ধমূল।

চাপা কষ্টে নিজের ভেতরে ছটপট করে নিলয়।মনের ভেতর থেকে কেউ একজন বলে আজও ভালোবাসাটা শুধু তোমারই জন্য অরণী।

নিলয় আর অরণীর অন্তরালের অভিনয় টা তাদের নিজেদেরই অগোচরে থেকে যায়।অন্তরীক্ষে থাকা কেউ একজন হয়ত বা প্রত্যক্ষ করেও চুপ করে থাকে!
আর পথের দেবতা প্রতীক্ষায় থাকে আবার কখনও তাদের দেখা হওয়ার অপেক্ষায়।হয়ত বা সেদিন ভুল বোঝাবোঝির অবসান হলেও হতে পারে।


 --------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------


***ভালবাসি তোকে ভালবাসি***

লাল গোলাপটা বাম হাতের পেছনে আড়াল করে ডান হাত নেড়ে মৃদুস্বরে নির্ঝরকে ডাকল শান্তনু। বামহাতের গোলাপটা ডানহাতে ট্রান্সফার করতে যাবে ঠিক তখনই গোলাপের কাঁটা বিঁধে গেল বামহাতের তর্জনীতে আর হাত থেকে গোলাপটা পড়ে গেল মাটিতে। মুখ থেকে বেরিয়ে এল একটা ব্যর্থতার বা ব্যথার শব্দ।
এক লাফে বিছানা থেকে উঠে বসল শান্তনু। বামহাতের তর্জনীটা ভাল করে চেক করতে লাগল। মনে হচ্ছে কোন কাঁটা ফোটার ব্যথা মস্তিষ্কের কোষগুলোতে ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু আঙুলে কোন ক্ষতচিহ্ন নেই।
নির্ঝর শান্তুনুর সবচেয়ে ভাল বন্ধু। শান্তুনু একটু হ্যান্ডসাম কিন্তু অনেকটা গাধা টাইপের ছেলে। অন্যদিকে নির্ঝর ভীষণ বুদ্ধিমতি এক মেয়ে। দুজনের কম্বিনেশনটা বেশ। সারাক্ষণ একসাথে- ক্লাসে, ক্যান্টিনে, লাইব্রেরিতে এমনকি খেলার মাঠেও। শান্তনু খুব তুখোড় ব্যাটসম্যান। ফ্লিক আর হুক শটদুটোকে একেবারে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে ও। শিল্পির তুলির আঁচড়ের মত এক একটা ফ্লিক শট খেলে ও। কিন্তু সমস্যা একটাই। ওর কোচ মানে নির্ঝর মাঠে না থাকলে ও ডাক তো মারেই এক্কেবারে গোল্ডেন ডাক মারে যদি বোলার স্ট্যাম্পে বল দিতে পারে। তখন মান্নাদের মত সুরেলা কন্ঠের মত ফ্লিক খেলা শান্তনুর উইলো থেকে বেরিয়ে আসে কান্নাদে টাইপের একটা আজব শট- না বলের লাইনে যাওয়া, না টাইমিং না স্টাইল। মনে হয় জীবনে প্রথম ব্যাট করতে নামা কোন মেয়ে দুই পা ছুঁড়ে একটা শট মারার চেষ্টা করছে। ফলাফল স্ট্যাম্প ছ্যাড়াব্যাড়া। আর মাথা নিচু করে ক্রিজ থেকে এক শৈল্পিক ব্যাটসম্যানের অশৈল্পিক প্রস্থান।
একবার হল কী আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ। নির্ঝর আটকা পড়ল মহামান্য দুই নেত্রীর অতীব প্রিয় দুই দলের মরণ মরণ খেলার মাঝখানে। ব্যাটিংয়ে নেমেছে শান্তনু। রাইট হ্যান্ড ওপেনিং ব্যাটসম্যান। বোলার বেচারা যদি জানত যে, ব্যাটসম্যান তার বিশেষ কোচের দর্শন ছাড়া চোখে দেখে না, অন্ধের মত ব্যাট চালায়, তবে তো সোনার হাস নিয়েই মাছ ছাড়তে হত শান্তনু বাবাজির। কী হল, বোলার তো আউট সুইং আর বাউন্সার দেওয়াতেই ব্যস্ত। নতুন বল, উইকেটে ঘাস, সবুজ ঘাস, আর চশমু ব্যাটসম্যানকে দেখে তো মনে হয় না উইকেট সোজা বলে আউট হবে। প্রথম ওভার নাচানাচি করেই পার করল শান্তনু। দ্বিতীয় ওভারে স্পিনার আসল। এ যুগের ক্রিকেটের নিউ স্ট্র্যাটেজি, সাথে প্রতিপক্ষ ক্যাপ্টেনের আজব এক্সপেরিমেন্ট। বোলার যদি আমাদের বিখ্যাত ম্পিনার মোহাম্মদ রফিক এর ওই ইন্টারভিউটা দেখত আর রফিক ভাইয়ের সেই উপদেশটা মাথায় রাখত –“আমি সব সময় ডান্ডা সোজা (স্ট্যাম্প সোজা মানে উইকেট টু উইকেট) বল করতাম ” তবে প্রথম বলেই সিঙ্গেলের বদৌলতে স্ট্রাইকে আসা শান্তনুর চশমার ভেতরের চারচোখ দিয়ে দেখা সর্ষেফুলের কল্যাণে ওভারের বাকি পাঁচটা বলেই নিশ্চিত সাজঘরের পথ মাপতে হত। ভাগ্য সুপ্রশন্ন, বোলার অফ স্ট্যাম্পের বেশ বাইরেই পাঁচটা বল ডেলিভার করল আর শান্তনু ওর মেধার (ক্রিকেট মেধা মনে হয় না, অন্য মেধা) জোরে পাঁচটা বলই ছেড়ে দিল। এমনকি ওর মাপের ব্যাটসম্যানের কাছে পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট প্রলোভন প্রদর্শনরত ডেলিভারিগুলোও ছেড়ে দিল। সবাই তো অবাক (যারা কোচের ব্যাপারটা জানে না)। তৃতীয় ওভারের শুরুতেই মহিলা কোচের আগমন। হাত নেড়ে জোরে এক ডাক দিল কোচ সাহেবা। শান্তনুর মুখে এক শান্ত হাসির সন্ধান পাওয়া গেল। তারপর শুরু হল ব্যাটিং তান্ডব। স্ট্রাইকে যাওয়া মাত্র ওভারের বাকি তিনটা বলকে কব্জির মোচরে সীমানা ছাড়া করল। এর পর না পেসার না স্পিনার কোন বোলারই পাত্তা পেলনা শান্তনুর কাছে। যে স্কোর ওর দল করল তা চেইজ করার আশা বা সাহস মনে হয় খোদ সাউথ আফ্রিকাও করেনি সেই ম্যাচে যে ম্যাচে তারা অস্ট্রেলিয়ার করা ৪৩৪ চেইজ করে জিতেছিল।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ এবং ম্যান অব দ্যা টুর্নামেন্ট দুটোই শান্তনু। নির্ঝর আর ওর খুশি দেখে কে? বেচারা দুইজন জড়িয়ে ধরল একে অপরকে মাঠের মধ্যেই। একটু পর শান্তনু তো লজ্জায় কথাই বলেনা আর নির্ঝর ওকে ছেড়ে ছোট্ট এক দৌড়ে মাঠের বাইরে চলে গেল।
পরদিন ক্লাসে শান্তনু বসল অন্য এক মেয়ের পাশে। নির্ঝর এসে দেখল ওদের। বিদ্যুৎবেগে অন্য এক ছেলেকে হাত টেনে সিট থেকে উঠিয়ে ওর পাশে অন্য সিটে বসালো। ক্লাসের সবাই তো মুখ টিপে হাসছে আর দুজনের এক্সপ্রেশনশ উপভোগ করছে। শান্তনু ক্যাবলাকান্তের মত চশমার ফাঁকা দিয়ে এক পলক দুই পলক দেখছে একটু পর পর। আর নির্ঝর কখনো মুখ ভেঙচিয়ে উঠছে, কখনো জিভ বের করে ভ্যাঙ্গাচ্ছে ওকে। ক্লাস শেষে তো তুলকালাম কান্ড বেঁধে গেল। যে মেয়েটাকে সাথে নিয়ে বসেছিল শান্তনু ওর সাথে প্রায় চুলাচুলি লেগে যাওয়ার উপক্রম হল নির্ঝরের। বেচারা মেয়ে তো অবাক। আকাশ থেকে পড়ল। কোন কারণ ছাড়াই নির্ঝরের ঝড়ের কবলে পড়ে বেচারার প্রথমে মনের আকাশ কালো হলো তারপর শুরু হল গর্জন, পাল্টা হামলা। শান্তনু দুইজনের মাঝে এসে চশমাটা গেল ভেঙে। তখন তো ও চোখেই দেখে না। কিভাবে যে ক্রিকেট খেলে ভেবে পায় না অনেকে। শেষে নির্ঝর ওর ঝগড়ার বেগ কমিয়ে মাফ সাফ চেয়ে ওই মেয়েকে শান্ত করল। আর শান্তনুকে হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগল।
বাড়ির গেটে পৌঁছেই নির্ঝর ওর ডান হাতের তালুতে ছোট্ট করে লিখল, “ভালবাসি, গাধা তোকেই ভালবাসি। কিন্তু তোর মুখ থেকে শোনার অপেক্ষায় আছি।” তারপর শান্তনুর চোখের সামনে তিনচার বার হাত নেড়ে জিজ্ঞেস করল- আমার হাতটা দেখে দেতো। শান্তনু বলল- আমিতে হাত দেখতে পারি না। চল কোন জ্যোতিষির কাছে যাই। তখন নির্ঝরের মনে হল এক ঘুষিতে ওর নাকটা ফাঁটিয়ে দিতে। কেন যে এই কানাটার সাথে কানামাছি খেলছে নিজেও বুঝতে পারে না।
শরতের পরিস্কার আকাশ। পাঁজা তুলোর মত শুভ্র মেঘের ভেলা ভেসে যাচ্ছে। নির্মল বাতাস বইছে। সে বাতাসে সাদা কাশবনের ভেতরে প্রেমের আন্দালন শুরু হয়েছে। হেঁটে যাচ্ছে শান্তনু আর নির্ঝর। পাশাপাশি, কাছাকাছি; শান্ত আর অস্থির চিত্তের দুই মানব মানবী। তিনটা বছর তাদের এই দুই মনের একসাথে বসবাস। গত ছমাস থেকেই শান্তনুকে ভালবেসে ফেলেছে নির্ঝর। কিন্তু যত চঞ্চলই হোক শান্তনুকে মনের কথাটা বলার ক্ষেত্রে নির্ঝরের মনের সকল চাঞ্চল্য হার মেনেছে। ক্লাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রফেসরের মুখের ওপরও সাহসিকতার সাথে কথা বলা নির্ঝর কেন যেন এই সহজ কথাটা বলতে পারছে না। কবিগুরুর সেই বাণীকে সত্য প্রমাণ করে আজ সে তার মনকে এই বলে বুঝ দেয়- “সহজ কথা বলতে আমায় কহযে, সহজ কথা যায়না বলা সহজে।”
নির্ঝর শান্তনুকে জিজ্ঞেস করে- শান্ত, বলতো প্রেমের কথা কে আগে বলে ? ছেলে না মেয়ে?
শান্তনু গম্ভীরভাবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে উত্তর দেয়- ছেলের যদি মেয়েকে পছন্দ হয় তবে ঘটককে দিয়ে প্রস্তাব দেয়, নিজেও বলতে পারে, যদি সাহসী হয়, আর যদি সাহসী না হয় তবে বন্ধুদের দিয়ে বলায় বা মেয়েটার বলার অপেক্ষায় থাকে।
নির্ঝর হেসে দিয়ে বলে- তুই কী করবি?
শান্তনু বলে- আমি আবার কাকে ভালবাসবো? আর আমার মত কানাকে কে ভালবাসবে?
নির্ঝর সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে- তুই কানা হলে অমন ফ্লিক শটগুলো কিভাবে খেলিস?
শান্তনু মৃদু হেসে বলে- ব্যাটিংটা আর স্পেশালি ওই শটটা ভীষণ ভালবাসি। তাই মনের চোখে দেখতে পাই।
নির্ঝর ফিসফিসিয়ে বলে- আমাকে ভালবেসে দেখনা, আমিতো ক্রিকেট বলের চেয়ে অনেক বড়।
শান্তনু বলল- কিছু বললি?
নির্ঝর এক ঝাড়ি দিয়ে বলল- ধুর কানা, কানেও খাটো হয়ে গেলি নাকি?
ভার্সিটির শেষ দিন। নির্ঝর ঠিক করেছে আজ যদি শান্তনু ওকে কিছু না বলে তাহলে ও ধরে নেবে যে শান্তনু ওকে ভালবাসে না। তখন নির্ঝরও আর ওর মনের কথাটা বলবেনা। সবাই সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। ওরা দুজন হাঁটছে চিরচেনা ক্যাম্পাসের পথ ধরে। হাঁটতে হাঁটতে লেকের পাড়ে গিয়ে বসল ওরা। দুজনেই খুব চুপচাপ। আজ যে যার বাড়ি চলে যাবে। আবার কবে দেখা হবে ঠিক নেই। ৫ টা বছর একসাথে কেটেছে। কত দুষ্টোমী, হাসি, কান্নার স্মৃতি জড়ানো সময়গুলো।
নিরবতা ভেঙে নির্ঝর বলে উঠল- শান্ত, তুই বিয়ে করবি কবে?
শান্তনু চমকে উঠল- ওর হাত থেকে একটা কাগজের টুকরো পড়ে গেল লেকের পানিতে। ও করল কি লেকের পানিতে হাঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারপর ও হাবুডুবু খেতে লাগল। নির্ঝর চিৎকার করতে লাগল- কেউ আছেন? বাঁচান। প্লিজ হেল্প………………………………………………………………..
আশেপাশে কেউ নেই। পরিবেশটা কেমন যেন রূপালী পর্দার সাদাকালো সিনেমার মত। আলোও না, অন্ধকারও না- স্বপ্নের মত। নির্ঝর আর শান্তনুও স্বপ্নের মতই অসহায়। নির্ঝরও সাঁতার জানে না। শেষমেস নির্ঝরই পানিতে ঝাঁপ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।কী আর করা ওর ভালবাসার সাথেই সলিল সমাধী হোক……………………………………….......
প্রচন্ড ঝাঁকুনি খেয়ে ঘুম ভাঙল নির্ঝরের। বিছানায় বসে বসে হাঁপাতে লাগল ও। লাইটটা জালিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে শান্তনুকে ফোন করল সে।
রিং হচ্ছে……….ওয়েলকাম টিউন বাজছে-প্রেমের মরা জলে ডোবে না………………
এই রিংটোন আবার কবে সেট করল? নিজেকে সম্পূর্ণ বোকার স্বর্গের বাসিন্দা মনে হল নির্ঝরের। দুইবার বাজার পর ফোন ধরল শান্তনু।
-হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
-এ্ই, তুমি ঠিক আছো?- কন্ঠে উদ্বেগ নিয়ে বলল নির্ঝর।
-আ আ আপনি কে বলছেন? এখন রাত কটা বাজে?- শান্তনুর কণ্ঠে ভয়। মনে হচ্ছে যেন ভুতে ফোন করেছে।
-আরে আমি, আমার কন্ঠটাও ভুলে গেলা? নির্ঝর নিজেই বোকা বনে গেল। ওকে তুমি করে বলছে কেন?
-দেখুন এতরাতে আমাকে ডিসটার্ব করবেন না। আমি একজনকে ভালবাসি। কাল ওকে বলব। অনেকদিন বলার সাহস পাইনি। কাল বলতেই হবে। নইলে ওকে আর পাবনা। আপনি প্লিজ ফোন করবেন না আর। এই বলেই ফোনটা রেখে দিল শান্তনু। একেবারে সুইচ্ড অফ।
নির্ঝর বুঝতে পারলনা কাকে ভালবাসে ও। ওকে? না অন্য কেউ আছে? ওই যে ওইদিন যে মেয়েটার সাথে ক্লাসে বসেছিল ও না তো? এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ল। বাকি রাতটা আর কোন স্বপ্ন বা দূঃস্বপ্ন দেখা হলনা।
পরদিন ক্যাম্পাসে গিয়ে নির্ঝর দেখল শান্তনু ওই মেয়েটার সাথেই বসে আছে আর হেসে হেসে গল্প করছে। নির্ঝরের মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আজ ওর একদিন কি আমার একদিন। দৌঁড়ে দিয়ে শান্তনুর হাত টেনে ওঠালো।
- কী হচ্ছে এখানে? কাল রাতে ফোনটা রেখে দিলি কেন? নির্ঝরের কন্ঠে অধিকার ঝরে পড়ছে।
- কাল রাতে একটা বাজে মেয়ে ফোন করে তুমি তুমি করে কথা বলছিল। তাই আমি রেখে দিছি ফোনটা আর বন্ধ করে রেখেছিলাম। শান্তনু খানিকটা ভয়ের সাথে জবাব দিল।
- নাম্বারটা দেখে রিসিভ করিসনি? নির্ঝরের কন্ঠে এবার তাচ্ছিল্যের ভাব।
- না, মানে চশমা চোখে দিয়ে তো ঘুমাই না। আর ঘুমের ঘোরে চশমাটা পাচ্ছিলাম না। শান্তনুকে দেখে মনে হচ্ছে নির্ঝর ওর দজ্জাল বউ বা হাইস্কুলের কড়া মহিলা টিচার।
-নাম্বারটা চেক করে দেখতো। নির্ঝর ওর মোবাইলের দিকে ইশারা করে বলল।
শান্তনু রিসিভ্ড কল চেক করে দেখে নির্ঝরের নাম্বার। ও এবার অবাক হয়ে বলে ওঠে- আজব তো, নাম্বারটা কই গেল? তাহলে নিশ্চই স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমি প্রায়ই ভুতের স্বপ্ন দেখি। নির্ঝরের এবার হাসি পেয়ে গেল। ওর মুচকি হাসি ধীরে ধীরে ঝর্ণার মতই ছন্দময় বেগ পেতে লাগল।
-তা, কী কী কথা হলো ভুতটার সাথে? নির্ঝর হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করল।
- বলা যাবে না। টপ সিক্রেট। এক বছর বুকে চাপা দিয়ে রেখেছি। শান্তনু খুব গর্বসহকারে বলল।
-আচ্ছা, আমি গেলাম। বাস ধরতে হবে। কতদিন পর বাড়ি যাব। এবার অবশ্য একেবারে যাওয়া।
তুই ভাল থাকিস। ফোনে কথা হবে। আল্লাহ হাফেজ…………… বলেই হাঁটা ধরলে নির্ঝর।
-আরো কিছুক্ষণ থাকনা। চলে গেলে তো আর দেখা হবেনা। শান্তনুর কন্ঠে কাতরতা।
-কিছু বললে বলে ফেল। বেশিক্ষণ থাকতে পারব না। নির্ঝর মনে মনে আশা করছে গাধাটা এবার নিশ্চই বলতে পারবে।
- মানে, একটা কথা। কিভাবে যে বলি………. শান্তুনু সাহস সঞ্চয় করছে।
- আরে বলে ফেল। কী বলবি?
- মানে তোর কি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে? শান্তনুর চেহারায় একটা বিষন্ন প্রশ্নবোধক চিহ্ন।
- না, কেন? কোন পাত্র আছে তোর জানাশোনা? নির্ঝর চেহারায় সিরিয়াস ভাব এনে বলল।
- না, মানে তোর কেমন ছেলে পছন্দ? শান্তনুকে দেখে মনে হচ্ছে ওর মাথায় কেউ পিস্তল ঠেকিয়ে রেখেছে।
- অবশ্যই আমার মত বুদ্ধিমান আর সাহসী হলেই চলবে। - নির্ঝর হেসে হেসে জবাব দিল।
- কেমন সাহসী? কী করতে হবে? শান্তনু এমনভাবে জবাব দিল যেন ও নিজেই সেই সাহসী ছেলে হয়ে সাহসের পরীক্ষা দেবে।
- তুই সাঁতার জানিস? নির্ঝর সিরিয়াস ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল।
- জানি না, মনে হয় পানিতে নামলে পারব। কিন্তু কখনো ট্রাই করিনি। শান্তনুর মুখ হালকা শুকনো হালকা ঘামে ভেজা।
- আমি যদি ওই লেকের পানিতে পড়ে যাই, তুই কী করবি? নির্ঝর প্রশ্ন করল।
-ইয়ে মানে আমিও ঝাঁপ দেব। তোকে বাঁচাতে হবে তো. শান্তনু নির্ভয়ে জবাব দিল যেন ও বিড়াট সাঁতাড়ু।
-আচ্ছা আমি গেলাম রে। দেরি হয়ে যাচ্ছে। নির্ঝর প্রসঙ্গ বদলে বলে উঠল।
শান্তনু পকেট থেকে একটা নীল খাম বের করে নির্ঝরের হাতে দিয়ে দিল। তারপর মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। নির্ঝর খামটা খুলে দেখল। একটা সাদা কাগজ।
-এই সাদা কাগজ নীল খামে করে এনেছিস কেন? এটা কেমন উপহার? নির্ঝর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
-কী বলিস? সাদা কাগজ? কাগজটায় তো লেখা ছিল। ওটা কোথায় গেল? শান্তনু সর্বহারার মত পকেট হাতাতে লাগল। শেষে শার্টের বুক পকেট থেকে ছোট্র কবিতা লেখা একটা সাদা কাগজ বের করল।
“ভালবাসি আর নাই বাসি
ভালবাসি ভালবাসা।
ভালবাসি আর নাই বাসি
হয়েছিল কাছে আসা।
মনের সকল আশা
এতদিনে পেল ভাষা।
ভালবাসি তোকে ভালবাসি।
যাবে কি আমাকে ভালবাসা?”
মানুষ মাঝে মাঝে স্বপ্নগুলো এতোটাই বাস্তব মনে করে যে, বাস্তবে স্বপ্নগুলোকে খঁজে ফেরে এমনকি নিতান্তই অবাস্তব টাইপের স্বপ্নগুলোকেও কী এক অদ্ভুত বিশ্বাস নিয়ে খুঁজতে ভালবাসে।
চিঠিটা পড়ে নির্ঝরের চোখে পানি এসে গেল। শান্তনুর কাছে গিয়ে হাতটা ধরে বলল, এতদিন লাগল কথাটাবলতে? তুই আসলেই একটা গাধা আর ভীতুর ডিম। শান্তনুর চোখেও পানি এসে গেল। ওদের আনন্দ অশ্রুতে আকাশেরও কান্না পেয়ে গেল। আকাশ কী শুধু কষ্টেই কাঁদে। নাকি মানুষের মতই গভীর আনন্দেও ওর কান্না পায় মাঝে মাঝে?


....................... শামসুল আলম



 --------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------


শুভ্রা নামের মেয়েটা আজ অনেক সুন্দর করে সেজেছে ।
নীল শাড়িতে কপালে লাল টিপ, দুই
চোখে টানা টানা করে কাজল দেওয়া । মাথার
চুলগুলো পেছনে সুন্দর করে খোপায় বাধা ।
ঠোঁটে মিষ্টি লাল লিপস্টিক । হাতে নীল কাচের চুড়ি ।
রীতিমত স্বর্গ থেকে নেমে আসা পরীর মত লাগছে ওকে ।
আর লাগবেই বা না কেনো ? আজ যে এই মেয়েটার বিয়ে
। আর বিয়ের দিন প্রত্যেকটা মেয়েই সুন্দর
করে সাজে । আর এই সুন্দর করে সাজার পেছনে উদ্দেশ্য
থাকে শুধুমাত্র একজন কে দেখানোর জন্য । আর শুভ্রা যার
জন্য সেজেছে সেই ছেলেটির নাম হচ্ছে রাহাত । হ্যা,
রাহাতের সাথেই আজ ওর বিয়ে ।
অবশ্য বিয়ে উপলক্ষে বাড়িটা একদম ই সাজানো হয়নি ।
কারন বিয়েটা পারিবারিক ভাবে হচ্ছে না ।
শুভ্রা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে যাচ্ছে ।
হ্যা, শুভ্রা অনেক ভেবে চিন্তেই এই ডিসিশন
টা নিয়েছে । রাহাত তাকে খুব ভালবাসে । কিন্তু শুভ্রার
বাবা মা কখনই তাদের দুজনের এই সম্পর্ক মেনে নিবেন
না । কিন্তু শুভ্রা রাহাতকে ছাড়া অন্য
কারো কথা ভাবতেও পারে না । তাই দুজন প্ল্যান
অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত
নিয়েছে পালিয়ে কাজি অফিসে বিয়ে করার । সকাল
এগারোটায় মগবাজার কাজী অফিসের
সামনে থাকবে রাহাত । ঘড়ি দেখল শুভ্রা ।
ন"টা বেজে গেছে । উহু দেরি করা চলবে না । শুভ
কাজে দেরি করতে নেই ।
বেলা ১১টা । কাজী অফিসের ভেতরে বসে আছে শুভ্রা ।
পাশে রাহাত ।
বিয়েতে সাক্ষী হিসেবে এসেছে রাহাতের কিছু বন্ধু ।
কিছুক্ষণের মাঝেই শেষ হয়ে গেলো সকল
আনুষ্ঠানিকতা । পার হয়ে গেলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ । এখন
থেকে শুভ্রা রাহাতের বিবাহিত স্ত্রী ।
কোথায় যাবো এখন ? জানতে চাইলো শুভ্রা
কোথাও না সোনা, রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবো এখন আমরা
ফাজলামি কোরো না । বউকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায়
ঘুরবা !!!
হুম ঘুরবো
একটু সিরিয়াস হই আমরা ? প্লিজ ?
ওকে, সিরিয়াস । চল আমরা এই যান্ত্রিক শহর ছেড়ে একটু
দূরে যাই, যেখানে শুধু তুমি আর আমি ।
কোথায় এটা ?
টাঙ্গাইল । আমার খালার বাড়ি । খালার
কাছে গিয়ে আগে সব খুলে বলতে হবে । পরে উনিই সব
ম্যানেজ করবেন । আমাদের একমাত্র আশ্রয় এখন উনি ।
রাহাত ! পারবেন তো উনি ? সত্যি ?
হুম ১০০%
শুভ্রা আর রাহাত খালার বাড়িতে পৌঁছে গেছে ।
শুভ্রা বসে আছে একটি ঘরে । বাসায় কেউ নেই । বাসায়
কাউকে না পেয়ে রাহাত ফোন দিল তার খালাকে ।
খালা জানালেন তিনি এলাকার একটি বিয়ের
অনুষ্ঠানে গেছেন । ফিরতে রাত হবে । রাহাতের
কাছে অতিরিক্ত চাবি ছিল । সেই চাবি দিয়েই
রাহাতকে বাসায় ঢুকে বিশ্রাম নিতে বললেন তিনি ।
বাসায় এসে বিস্তারিত কথা হবে ।
"রাহাত, আমার কেন জানি ভয় করছে," শুভ্রা বলল ।
.... ভয় !! কিসের ভয় !! অবাক হয়ে জানতে চাইল রাহাত ।
"জানি না কিসের ভয়, কিন্তু কেমন জানি লাগছে..."
"আমি পাশে থাকার পর ও তোমার ভয় লাগে !"
কিছুটা আহত কণ্ঠে বলল রাহাত ।
"না না, আসলে সবকিছু প্রথম প্রথম তো । তাই
এমনটা লাগছে হয়তবা ।" শুভ্রা হাল্কা গলায় বলল ।
" আচ্ছা, শোন, তুমি কোন চিন্তা করো না, আমি আর
তুমি দুজনে মিলে সব সামলে নিব ।
কি পারবো তো আমরা ? হু ? "
হু ।
ওকে তুমি বস, আমি তোমার জন্য চা বানিয়ে আনছি ।
আচ্ছা ।
শুভ্রা আর রাহাত এই মুহূর্তে মুখোমুখি বসে চা খাচ্ছে ।
রাহাত মুখে হাসি । এই ছেলেটার হাসিটা খুব অদ্ভুত ।
দেখলেই মায়া লাগে । বুকের কোন জায়গায় যেনো খচ
করে বাধে । এই হাসি দেখেই ওর প্রেমে পড়েছিল সে ।
আহা !! সেই দিনগুলো !!! শুভ্রার মনে পরে যায়
পুরোনো সেইসব দিনের কথা ।
আস্তে আস্তে একটা ঘোরের মাঝে চলে যায় সে ।
নিঃশ্বাস গভীর হয়ে আসে । তারপর.... তারপর শুধুই
নিস্তব্ধতা....
# ভাগফল :
শুভ্রার যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন রাহাতকে আর খুজে পায়
না সে । নিজেকে আবিষ্কার করে ছোট একটা টিনের
ঘরে । সামনে দুজন অপরিচিত মহিলা বসে আছে । নিজের
শরীরের দিকে তাকিয়ে শুভ্রা লক্ষ্য করে গায়ে অসংখ্য
কামড়ের দাগ, কোন কাপড় নেই । সারা শরীর জুড়ে তীব্র
ব্যাথা । ঠোঁটগুলো প্রায় রক্তাক্ত হয়ে আছে । তাদের মুখ
থেকেই নোংরা ভাবে জানতে পারে রাহাত তাকে ৫০
হাজার টাকার
বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে পতিতালয়ে । এখন
থেকে বাকি জীবন এই পতিতালয়েই তাকে জীবন
কাটাতে হবে । যে ভালবাসার মানুষটির হাত ধরে সে ঘর
ছেড়েছিল বাবা মার ভালবাসাকে উপেক্ষা করে, সেই
মানুষটাই তাকে বিক্রি করে দিয়েছে ।
বিক্রি করে দিয়েছে পতিতালয়ে, একজন
পতিতা হিসেবে ।
# ভাগশেষ :
সকাল বেলা আয়নার
সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে নিশিতা । আজ
সে ভার্সিটির ক্লাস ফাকি দিয়ে লং ড্রাইভে যাবে ।
রাহাতের সাথে আজ তার ফার্স্ট ডেট ।
ভেতরে ভেতরে উত্তেজনায় ফেটে যাচ্ছে সে । ছটফট
করছে । মনের ভেতর কত কিছুই উকি দিচ্ছে ।
নিজেকে শান্ত রাখতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে । অথচ
আয়নার সামনে একাকি দাঁড়িয়ে মুচকি হাসা এই
মেয়েটির বিন্দুমাত্র ধারনা নেই ভবিষ্যতে তার
সাথে কি হতে যাচ্ছে ।
লেখা- সামিউল ওয়াকিল তমাল

 --------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------

*************মা************




ছাদের এক কোনায়
দাড়িয়ে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে মেয়েটা।
কিছু বলতেও পারছিনা কিছু সইতেও
পারছিনা। নাহ থাক আজ আর
বাধা দেবোনা। অন্তত আজকের
দিনটা কাঁদুক।
না কাঁদলে বুকটা পাথর হয়ে যাবে।
কেঁদে কেঁদে মনটা হালকা করুক।
[]
লাবণ্য! আমার মেয়ে।
গত পনেরো টা বছর বুকের ভিতর
আগলে রেখেছি। শুধু ওর জন্মদিন
ছাড়া আর কখনোই বুঝতে দেই
নি যে তার মা তার সাথে নেই।
আমিই ওর মা! আমিই ওর বাবা!
আমার মেয়েটাও তা বুঝে। তাই
তো আমাকে আড়াল করে ছাদের এক
কোনে এসে লুকিয়ে লুকিয়ে ফুফিয়ে কাঁদছে।
নিজের জন্মদিনে জন্মদায়িনীর
কথা কার না মনে পড়ে?
ছোট বেলায় মাকে হাড়িয়েছে।
মা কি জিনিস সেটাই
বুঝতে পারে নি মেয়েটা আমার।
তার সব বন্ধুদের মা আছে শুধু তার নেই।
সারা দিন বন্ধুদের কাছে মায়ের গল্প
শুনে দিন
শেষে আমাকে এসে বলে বাবা ওরা এমন
কেনো করে বলতো?
ওরা জানেনা আমার বাবাই আমার
মা? আমার বাবার মতো বাবা আর
কয়টা হতে পারে? চাইনা আমার মা!
আমার বাবাই আমার পুরো পৃথীবি!
মেয়েটা এই কথা বলে যখন আমার
বুকে মাথা রাখে তখন মনে হয়
পুরো পৃথীবির যতো সুখ আমার
বুকে এসে ঠেকেছে।
পাগলি মেয়েটা বাবা ছাড়া কিচ্ছু
বুঝেনা।
মাঝে মাঝে বলি। মা ধর
তোকে বিয়ে দিয়ে দিলাম। তখন
আমায় ছাড়া কি করে থাকবি?
উত্তরে বলে আমি তাহলে বিয়েই
করবোনা
আমি হাসি আর হাসি।
আমি বলি তা কি করে হয় মা?
আমার যে কতো স্বপ্ন
তোকে রাজকণ্যার
মতো সাজিয়ে কোনো এক
রাজকুমারের হাতে তুলে দেবো।
মেয়ে আমার বলে!
আমি চলে গেলে তোমার
কি হবে বাবা? নাহ আমি তোমায়
ছাড়া কোথাও যাবোনা ।
পাগলী মেয়ে আমার! মাদার্স
ডে তে সব বন্ধুই তার মাকে উইস করে।
কিন্তু লাবণ্য পারেনা।
দিন শেষে বাসায় যখন
ফিরি চমকে দেয় আমাকেই!
কারণ আমিই যে ওর মা!
ওই দিন পুরো ঘড়টা সাজিয়ে,
মোমবাতি জ্বালিয়ে, আমার জন্য গিফট
হাতে নীল শাড়ি পড়ে অপেক্ষায়
থাকে কখন যে বাবা আসবে।
পাগলী মেয়ে আমার!
আমি কিছুই বলতে পারিনা! শুধু চোখ
দিয়ে কয়েক ফোটা জল বের হয়।
তা দেখে পাগলী মা আমার
আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে আই লাভ ইয়ু
বাবা!
চোখের
পানি মুছে দিয়ে বলে বাবা আমি আমার
সব বন্ধুদের বলে দিয়েছি। আমিও
মাদার্স ডে তে আমার মাকে উইস করি।
কিন্তু তারা বুঝেনা তুমিই যে আমার
মা তুমিই যে আমার বাবা।
কিছুই বলতে পারিনা আমি। শুধু
বুকে জরিয়ে ধরে কয়েক ফোটা জল
ফেলি।
[]
অর্পীতা! লাবণ্যের মা!
অর্পীতার সাথে বিয়ে হবার পর
আমাদের জীবণ খুব ভালোই কাটছিলো।
না চাইতেই অর্পীতা আমাকে একটা খুব
মূল্যবান উপহার দিয়েছে। হুম তা আর
কিছুই না
আমার পাগলী মা লাবণ্য কে!
খুব খুশি হয়ে অনেক
লাফালাফি করেছি। আর
অর্পীতা তা দেখে শুধুই হাঁসে আর
হাঁসে ।
তার ঠিক দু বছরের মাথায়
অর্পীতা নামের নিষ্টুর
মেয়েটা একা করে দিয়ে চলে গেলো আমাকে আর
লাবণ্যকে।
দিনটা ছিলো বৃষ্টির দিন। ছাদে কাপড়
শুকাতে দিতে গিয়েই স্লিপ
কেটে ছাদ থেকে পড়ে যায় অর্পীতা ।
পাড়া প্রতীবেশি হাসপাতালে নিয়ে যায়
অর্পীতাকে । অফিসে ফোন
পেয়ে ছুটে আসি বাসায় লাবণ্য
কে বুকে জরিয়ে কেঁদে কেঁদে হাঁসপাতালে ছুটে গিয়ে দেখি অর্পীতা চলে গেছে অনেক
দূরে। অনেক দূরে.....
যেখান থেকে কেউ আর ফিরে না।
অর্পীতাও আর ফিরে আসেনি।
সেই থেকেই লাবণ্যই আমার
বেঁচে থাকার এক মাত্র অবলম্বন।
[]
মেয়েটা আমার এখনো সেই কোনাটায়
দাড়িয়ে কাঁদছে যেই খানে ওর
মায়ের শেষ যাত্রা পথ ছিলো।
ছাদে একেবারেই আসে না এক মাত্র
এই দিনটা ছাড়া। তাই আজ আর
বাধা দেবো না পাগলীকে।
কাঁদ আরো কাঁদ। কেঁদেই যা মা!
কাঁদার মধ্যেও এক প্রকার
শান্তি আছে যেটা কাউকে বোঝানো যায়না।
আমি যে আর কাঁদতে পারিনা,
কি করে কাঁদবো সব চোখের জল
যে শুকিয়ে গেছে আমার শুধু তোর জন্য।
হ্যাঁ শুধু তোর জন্য আমি আর
কাঁদতে পারিনা।
লিখা :- নীরব



 --------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------



 "" মেঘবালিকা ""
পকেট থেকে চিঠিটা বের
করতে ইচ্ছে করছে না, কারন বুক
পকেটে রাখা চিঠিটা তার যথাস্থানেই
আছে। হৃদপিন্ডের প্রতিটি কম্পন
ছুয়ে যাচ্ছে বার বার এটাকে। এটা এক
সুখানুভূতির স্পর্শ। আসলে তার
লিখা চিঠি আমার হাতে পড়লেই
আমি ইতস্তত বোধ করি, কারন আমার
কাছে মনে হয় পড়লেই যদি শেষ
হয়ে যায়। যদিও আদ্রিতার
লিখা চিঠি আমি বার বার পড়ি,
নিজেকে শত বছরের তৃষ্ণার্থ মনে হয়
তখন।
আদ্রিতাটা অদ্ভুত একটা মেয়ে, অদ্ভুত
নয়তো কি? এই যুগে কেউ চিঠি লিখে!!!!
কিন্তু সে লিখবেই, কত বারণ করি তার
পরেও সে লিখে। তার যা হবার তাই হয়
বিপদটা যায় আমার উপর দিয়ে কারন উত্তর
টা যে আমাকেও চিঠির
মাধ্যমে দিতে হয়।
অতি সুন্দরী মেয়েরা নাকি ভীষন
বোকা হয় তার হাতে নাতে প্রমাণ
হচ্ছে আদ্রিতা। তাকে বোকা বলার
লজিক হচ্ছে সে আমার মত এক ভেগাবন্ড
এর প্রেমে পড়েছে। প্রতিবছর আমাদের
ডিপার্টমেন্ট থেকে " সাহিত্য " নামক
একটা ম্যাগাজিন বের হয়।
ডিপার্টমেন্টের সবাই লিখে আমিও
সেই বার একটা কবিতা দিয়েছিলাম।
সেটা ম্যাগাজিনের তলানিতে আশ্রয়
পেয়েছিলো। সাথে আমার নাম
এবং সেশন। ব্যাস অল্প কয়েকজনের
কবিতাটা হয়তো ভালো লেগেছিলো তার
মধ্যে আদ্রিতাও এক জন। কোথায়
থেকে নাম্বার
পেলো বা কিভাবে কালেক্ট
করলো তা জিজ্ঞেস
করা হয়নি তাকে কোনদিন। তবে প্রথম
কথা গুলো এখনো স্পষ্ট,
-- হ্যালো আপনি কি রাতুল??
- জ্বী, আপনি??
--
আমি নিজেকে মেঘবালিকা মনে করি।
উল্লেখ্য আমার দূর্বোধ্য কবিতাটার নাম
ছিলো " মেঘবালিকা "
আমি মোটামুটি নয় পুরোটাই টাসকিত।
বললাম
- ও, তবে এটা রং নাম্বার কারন
আমি এখনো অষ্টাদশীর সন্ধান
পাইনি তাই আমার কোন অষ্টাদশীর
স্বপ্নমানব হয়ে উঠা হয় নি।
-- আর কয়েকদিন পরেই
আমি অষ্টাদশী হবো।
- Congratulations!!!
-- আপনার কবিতাটা আমার খুব
ভালো লেগেছে।
- নিজেকে ধন্য মনে করছি।
-- আচ্ছা ছোট্ট একটা প্রশ্ন করি??
- হুম
-- আপনি কি আমার সম্পর্কে জানেন
মানে আমাকে চিনেন??
- ঠিক বুঝলাম না??
-- না মানে ঐ যে লিখলেন,
....আমার বেদনা বিন্দু শুদ্বরূপ
আমার তোমাতেই অনুসঙ্গ আদ্রি,
কল্পনায় নিশিযাপনের শুদ্ধতা
ফোটায় ফোটা তুমি রোদের বৃষ্টি।
- আমি এখনো কিছু বুঝি নাই
-- আমার সন্দেহ হচ্ছে?
- কেনো!!!!??
-- কবিতাটা কি আপনার লিখা??
- মানে কি??
- তবে বুঝেন না কেনো??
-- কি বুঝবো?
- জনাব কবি সাহেব, আমার নাম
আদ্রিতা রহমান বৃষ্টি।
তখন বিষয়টা পরিষ্কার হলো। কাকতালীয়
ভাবে মেয়েটার নাম আমি কবিতায়
ব্যবহার করেছি তাও দুই বার।
আমি তাকে বিষয় টা বলেছি তাও
সে নাছোড়বান্দা। নানা প্রশ্নের
সম্মুখীন আমি। তার পর
শর্তানুযায়ী দেখা করার স্থান
লাইব্রেরীতে। প্রথম দেখার পর
আমি তার রূপের আগুনে পুড়লাম
নাকি ঝলসে গেলাম ঠিক বুঝলাম না।
নিজেকে সামলে জিজ্ঞেস করলাম,
- এখন বলেন কেনো ডেকেছেন?
-- কবিরা নাকি উড়নচণ্ডী হয়, এই
কথাটা কি ঠিক??
- আমি কবি নই তাই জানা কথাও না।
-- তবে ভিতরের কবিকে বলে দিয়েন
এখন থেকে সব সাধু সন্ন্যাস ত্যাগ। এখন
কবিটা শুধুই আমার।
- আপনি কি আমাকে প্রপোজ করলেন!!!!??
-- আপনি অনেক জ্ঞানী মানুষ
আশা করি বুঝে নিবেন।
তার পর প্রায় অর্ধমাস
ভার্সিটিতে যাইনি ঐ মেয়েটার ভয়ে ।
তাতে কি মেয়েটা ঠিকই আমার খোজ
রাখতো।
ফোন দিতো প্রতিদিন। এড়িয়ে যাওয়ার
অনেক
চেষ্টা করেছি তবে অবশেষে ব্যার্থ
আমি। পরাজয় বরণ করলাম তার
পাগলামী আর আবেগের কাছে।
পরাজিত হয়েও যে অদ্ভুত
একটা অনুভূতি হয় তা সেই দিন প্রথম
জানলাম। কোন এক শরৎ বিকেলে
তার সাথে আবার আমার দেখা,
- তোমার জন্য নূপুর এনেছি
-- পড়িয়ে দাও
- হারাবে নাতো কখনো?
-- হারিয়ে ফেলেছি
- কি?
-- আমাকে তোমাতে। আর কিছু
হারানোর সাধ্য নেই। মুষ্ঠি বদ্ধ
করে রাখবো তোমায়, চোখের কাজল
হবে তোমার সাথে আমার অনুষঙ্গ আর
বিন্দু নিঃশ্বাসের শেষ অবস্থান
হবে তুমি।
- প্রতিজ্ঞা করছো?
-- তোমায় ছুয়ে।
তারপর থেকে এখনো এই
পাগলীটা আমি সন্ন্যাসের সাথেই
আছে। কত যে পাগলামো তার। যখন
বলে তখনি তার বাসার
সামনে যাওয়া অবশ্যই বাঞ্চনীয়। এই
পাগলীটার জন্যই আমার জোছনাময়
রাত্রি গুলো এত্ত সুন্দর। প্রতিটি ভোর হয়
তার মিষ্টি কন্ঠ শুনে। আর
মাঝে মাঝে তার হাতের
স্পর্শে নিজেকে হারাই অবলীলায়।
তার জন্যেই আমার আরো অনেক দিন
বেঁচে থাকতে হবে কারন এই
পাগলীটাই আমায় মরতে দিবে না। আর
আমি মারা গেলে এই পাগলীটার
কি হবে? কে তার চিঠির উত্তর দিবে?
তার জন্য রাত
জেগে কবিতা কে লিখবে??
আজ কথায় কথায় অনেক রাত
হয়ে গেলো, যাই হউক ভালোই হলো,
আজ চিঠিটা বুক পকেটে রেখেই
ঘুমাবো। হৃদপিন্ডের প্রতটি স্পন্দন
ছুয়ে যাবে চিঠিটাকে বার বার ।
আমি স্বপ্নে বিভোর
হয়ে হারাবো মেঘবালিকার সাথে।
তারপর....
সুখনিদ্রায় তন্দ্রাচ্ছন্ন আঁখি পল্লব,
কুয়াশাস্নানে আদ্র শ্বেত মেঘবালিকা,
আড়ষ্ট হয়ে আশ্রয় খুজে আমার
বাহুডোরে,
উষ্ণ পরশের উষ্ণতায় আমরা দু-জন,
ভালোবাসার এক স্বার্থপর যুগল।
লিখা :- অর্থহীন অমিত


 --------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------

**** যেখানেই ভালবাসা থাকে,সেখানেই সম্পদ ও সাফল্যও থাকে****




[একটি অসাধারণ গল্প সবাই পড়ুন ]

এক মহিলা তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখলো উঠানের সামনে তিনজন বৃদ্ধ ব্যক্তি বসে আছেনতিনি তাদের কাউকেই চিনতে পারলেন নাতাই বললেন, ‘আমি আপনাদের কাউকেই চিনতে পারলাম না,কিন্তু আপনারা হয়তো ক্ষুধার্তআপনারা ভেতরে আসুন,আমি আপনাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করছি
...‘

তারা জিজ্ঞেস করলেন বাড়ির কর্তা কি আছেন?’ মহিলা বললেন,’নাতিনি বাইরে গেছেন

তাহলে আমরা আসতে পারবো না

সন্ধ্যায় যখন বাড়ির কর্তা ঘরে ফিরে সব শুনলেন তখন তিনি বললেন,'যাও তাদের বলো যে আমি ফিরেছি এবং তাদের ঘরে আসার জন্যে অভ্যর্থনা জানাচ্ছি
মহিলা বাইরে গেলেন এবং তাদের ভেতরে আসতে বললেনকিন্তু তারা বললো,‘আমরা এভাবে যেতে পারি না'

মহিলা জিজ্ঞেস করলেন,’ কিন্তু কেন? আবার কি সমস্যা?’

বৃদ্ধ লোকেদের মধ্যে একজন বললেন,’আমাদের মধ্যে একজনের নাম সম্পদআরেকজনের দিকে নির্দেশ করে বললেন,’তার নাম সাফল্য এবং আমি ভালবাসাএখন আপনি ভেতরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিন আমাদের কাকে আপনি ভেতরে ঢুকতে দেবেন'

মহিলা যখন ভেতরে গিয়ে সব খুলে বললেন তখন তার স্বামী অত্যন্ত খুশি হয়ে গেলেন এবং বললেন,'আসাধারন! চল আমরা সম্পদকে ডাকি,তাহলে আমরা ধনী হয়ে যাব!'

তার স্ত্রী এতে সম্মতি দিলেন না,’নাহ,আমার মনে হয় আমাদের সাফল্যকেই ডাকা উচিত'তাদের মেয়ে ঘরের অন্য প্রান্তে বসে সব শুনছিলোসে বলে উঠলো,'তোমাদের কি মনে হয় না আমাদের ভালবাসাকেই ডাকা উচিত? তাহলে আমাদের ঘর ভালবাসায় পূর্ন হয়ে উঠবে'

লোকটি বললো,‘ঠিক আছে আমরা তাহলে আমাদের মেয়ের কথাই শুনবো, তুমি বাইরে যাও এবং ভালবাসাকেই আমাদের অতিথি হিসেবে ডেকে নিয়ে এসো
মহিলাটি বাইরে গেলেন এবং বললেনআপনাদের মধ্যে ভালবাসা কার নাম? অনুগ্রহ করে তিনি ভেতরে আসুন,আপনিই আমাদের অতিথি'ভালবাসা নামের বৃদ্ধ উঠে দাড়ালেন এবং বাড়ির দিকে হাটতে শুরু করলেন,বাকী দুজনও উঠে দাড়ালেন এবং তাকে অনুসরন করতে লাগলেন

মহিলাটি এতে ভীষন অবাক হয়ে গেলেন এবং বললেন,'আমিতো শুধু ভালবাসা নামের বৃদ্ধকে ভেতরে আসার আমন্ত্রন জানিয়েছি,আপনারা কেন তার সাথে আসছেন?’
বৃদ্ধ লোকেরা বললো,'আপনি যদি সম্পদ আর সাফল্যকে আমন্ত্রন করতেন তবে আমাদের বাকী দুজন বাইরেই থাকতাম,কিন্তু আপনি যেহেতু ভালবাসাকে আমন্ত্রন জানিয়েছেন,সে যেখানে যায়,আমরা দুইজনও সেখানেই যাই

যেখানেই ভালবাসা থাকে,সেখানেই সম্পদ ও সাফল্যও থাকে

সগৃহীত





--------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------



সর্বকালের অন্যতম সেরা অমর-প্রেম কাহিনী



মোঘল সম্রাট আকবর পুত্র সেলিম আর রাজ্যের
নর্তকী অনিন্দ্য সুন্দরী আনারকলির প্রেম
সম্পর্কে আমরা সবাই-ই জানিপ্রেমের জন্য এত
বড় আত্মত্যাগ এই উপমহাদেশে আর কেউ
দেখেনিসম্রাট আকবর এই সম্পর্ক কখনোই
মেনে নেন নিকিন্তু সেলিম ও দমবার পাত্র নয়
আনারকলিকে পাবার জন্য নিজ পিতার
বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেকিন্তু
শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব
সহজেই পরাজিত হয়নিজ সন্তানের মৃত্যুদন্ড
ঘোষণা করেন আকবরসেলিম
কে বাঁচাতে আনারকলি তাঁর হার স্বীকার করেন,
এবং নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন
ভিক্ষা চানঅবশেষে, সেলিমের চোখের
সামনেই আনারকলিকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়!!



--------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------


নীল কষ্ট
লিখা --স্বপ্ন রাজ্য

(১)
পৃথা মাহিনকে যখন ফোন করে তখন
সময় রাত দেড়টার কিছু
বেশি। মাহিন তখন দক্ষিণ দিকের
জানালার পাশে খাটের
উপর হাঁটু মুড়িয়ে বসা।
হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। জানালার
বাইরে পূর্ণিমার আলোয় সব কিছু
পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান
কিন্তু জানালার এপাশটা অর্থাৎ
ঘরের ভেতরটা অন্ধকার।
পুরোপুরি অবশ্য অন্ধকার না,
জানালার উপরে সানশেড
না থাকায় চাঁদের
আলো সরাসরি মাহিনের
মুখে এবং গায়ে এসে পড়েছে।
মাহিনের নিজেকে ছাড়া ঘরের
আর কোন কিছুই দেখতে পাওয়ার
কথা না। অবশ্য
সে দেখার চেষ্টাও করছে না।
তার দৃষ্টি বাইরের দিকে।
সে চাঁদের আলোয় চকচক
করা শহরটাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে
দেখছে। মাঝে মাঝে চাঁদটার
দিকে সরাসরি তাকাচ্ছে। একবার
তাকালে সহজে চোখ
ফেরাচ্ছে না। এ যেন কোন এক
গোপন রহস্য উৎঘাটনের
চেষ্টা। চাঁদের আলো ইতোমধ্যেই
আশপাশের
সবকিছুকে রহস্যময় করে তুলেছে।
সবকিছু কেমন যেন
ভয়ংকর সুন্দর দেখাচ্ছে। চাঁদের
আলোর একটা বিশেষত্ব
হল, তা যে কোন জিনিসকেই ভয়ংকর
সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে।
এতই সুন্দর যে চোখ
ফেরানো যায় না। সম্মোহিতের মত
তাকিয়ে থাকতে হয়।
মাহিনও তাকিয়ে আছে, আর
কিছুক্ষণ পরপর
আনমনে সিগেরেটে হালকা টান
দিচ্ছে। সে কোন
একটা চিন্তায় এতই নিমগ্ন
যে দু'মিনিট
ধরে যে সমানে ফোন
বেজে যাচ্ছে তা সে খেয়ালই করল
না।
মোবাইলের রিংটোন তীব্র
থেকে তীব্রতর হওয়ায় একসময়
সে সম্বিৎ ফিরে পেল এবং খুব দ্রুত
বালিশের পাশ
থেকে মোবাইল
ফোনটা হাতে নিয়ে রিসিভ
করে কানে ঠেকাল। কে ফোন
করেছে দেখার প্রয়োজন
বোধ করল না। ওপাশ থেকে পৃথার
কণ্ঠ ভেসে এল।
-'হ্যালো' 'হুম' 'হ্যালো?' 'হুম'
-'হ্যালো মাহিন,শুনতে পাচ্ছিস?'
-'হুম,শুনতে পাচ্ছি, বল'
-'শুনতে পেলে হুম-হুম করছিস কেন?
কথা বলতে পারিসনা?'
- 'হুম'
-'আবার হুম?তুই কি ঘুমাচ্ছিলি?'
-হুম...ইয়ে মানে, না। কি বলবি বল'
-কিছু বলবো না, এমনি ফোন করেছি,
তোর সাথে কথা বলতে খুব ইচ্ছা করল
তাই। কি করিস?'
-কি করি?তেমন কিছু না।জানালার
পাশে বসে হাওয়া খাই। দেখ পৃথা,
তুই যে আমাকে এমনি এমনি ফোন
করিসনি সেটা আমি খুব ভাল
করে জানি। আমার কিছু
মেয়ে ফ্রেন্ড আছে যারা রাত
বিরাতে ফোন করে আমার
সাথে কথা বলতে চায়। তুই তাদের
পর্যায়ে পড়িস না। কি কাজে ফোন
করেছিস সেটা বল'?
-আজব তো! এভাবে জেরা করছিস
কেন? ফোন করে কি অপরাধ করলাম
নাকি?'
-না, তা করিসনি
-তাহলে?তোর অন্য ফ্রেন্ডরা রাত
বিরাতে কল করতে পারে,
আমি পারি না?
-হুম, পারিস
-আবার হুম?
মাহিনের
ঠোটে হাসি ফুটে উঠে।
-আচ্ছা, আর
হুম বলবো না।তারপর বল, কি খবর?' --
আমার কোন
খবর নাই।
খাচ্ছি দাচ্ছি ঘুমাচ্ছি। প্রতিদিন
রাত বারটার
মধ্যে ঘুমিয়ে যাই।আজকে এগারোটার
সময় বাসার কারেন্ট
চলে গেছে, এখনো আসেনি। তাই ঘুম
আসছে না। তুইতো জানিস
আমি গরমেরমধ্যে ঘুমাতে পারিনা।
বারান্দায়
বসে বসে হেডফোন
কানে দিয়ে রবীন্দ্র সঙ্গীত
শুনছিলাম,
হঠাৎ তোর কথা মনে পড়ল, তাই
ফোন দিলাম। তুই তো এ
সময় ঘুমাস না। তাই ভাবলাম তোর
সাথে গল্পকরে সময়টা পার করে দেই।'
((২))
মাহিনের হাতের সিগারেট শেষ
পর্যায়ে ছিল।
সে জানালা দিয়ে সিগারেটের
ফিল্টারটা বাইরে ছুঁড়ে ফেলে বলল,
-ভাল করেছিস। আমিও
একা একা বসে আছি। সময়
কাটছে না। আচ্ছা, রবীন্দ্র
সঙ্গীত শোনার সময় তোদের আমার
কথা মনে পড়ে কেন
বল?
-তোদের মানে! আর কারও
মনে পড়ে নাকি?
-হুম।রিনা, ইমু, মিলি ওরাও রবীন্দ্র
সঙ্গীত শোনার সময়
আমাকে প্রায়ই ফোন দেয়
-জানিনা তো। তুই
ছেঁকা খাওয়া পাবলিক তো,
হয়তো তাই। রবীন্দ্রনাথ
তো আবার ছেঁকা খাওয়া গান
বেশি লিখেছেন
-মার খাবি!!তুইও কারণটা জানিস না?
ওরাও
বলল জানেনা। অদ্ভুত'
-অদ্ভুতের কি আছে? মনে পড়তেই
পারে'
-আচ্ছা বাদ দে।অন্য কথা বল। সাইফের
কি অবস্থা?কথা বার্তা হয়?'
-আছে ভালই। কথা বার্তা আর কি?
দিন নাই, রাত নাই,
আমাকে কিছুক্ষণ পরপরই ফোন দেয়।
আমি ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে প্রায়
সময়ই রিসিভকরি না। ও চায়
আমি সারাদিন ওর সাথে কথা বলি।
কিন্তু আমার একদিনে ঘণ্টা খানেকের
বেশি কথা বলতে ভাল লাগেনা।
রাত দশটার দিকে একবার কথা হয়েছে।
হয়তো দেখবি এখনো ফোন
দিয়ে বসে আছে
মাহিন
হেঁসে ফেলল,
-তাই নাকি? তুইতো দেখি সাইফের
ব্যাপারে এখনো সিরিয়াস
হতে পারলি না। এখন
না হলে কখন হবি?
-এখন যেমন
হতে পারিনি তেমনি ভবিষ্যতেও
পারবো বলে মনে হয় না।
আগে যাও কিছুটা ভাল লাগত,
ইদানিং সাইফকে আমার অসহ্য লাগে।
ওর কথা বাদ।আনিতার কথা বল। এর
মধ্যে আর কথা হয়েছে?
-না, হয়নি'
মাহিন
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। 'ওর
সাথে শেষ কথা হয়েছে প্রায়
তিন মাস আগে। তুই তো সবই
জানিস। তারপরও জিজ্ঞেস
করার মানে কি?'
-না এমনি জিজ্ঞেস করলাম।
ভাবলাম কথা হলেও তো হতে পারে।
(একটু থেমে) ওর
ব্যাপারে তোকে একটা কথা বলার
ছিল'
-বল
-না থাক
-না থাক মানে?
- না থাক।আরেকদিন বলবো
-আরেকদিনবলবো মানে? আমার
সাথে ভন্ডামি করবি না!!
কি বলবি বল' 'ভন্ডামি না,
সিরিয়াস!!
-কথাটা কিভাবে বলবো ঠিক
বুঝতে পারছি না'
-কিভাবে বলবি মানে? মুখদিয়ে বলবি,
খাঁটি বাংলা ভাষায় বলবি!!
-মুখ দিয়ে যে বলবো সেটা তো জানি।
আমি ভাবছি কথাটা তোকে বলা ঠিক
হবে কিনা
-দেখ পৃথা,আমাকে কখনো কিছু বলার
হলে ঠিক বেঠিক
ভাববি না,বলে ফেলবি।
আমি কথা প্যাঁচানো পছন্দ করি না।
যা বলার ভনিতা না করে বলে ফেল
- তুই কি কিছুই শুনিসনি?
-কি শুনবো?
- আনিতার
যে বিয়ে ঠিক হয়েছে এ
ব্যাপারে তুই সত্যিই কিছু জানিস না?'
-কি বললি?
((৩))
মাহিনের মাথায়
আকাশ
ভেঙ্গে পড়ে। সেকেন্ডের জন্য তার
পৃথিবী থেমে যায়।
সে পৃথার বলা কথা গুলো বিশ্বাস
করতে পারেনা।
--আনিতা সবাইকে
ধরে ধরে রিকোয়েস্ট
করেছে যাতে তোকে বিয়ে ঠিক
হওয়ার কথাটা কেউ না বলে।
আমাকেও করেছিল, তাই
আমি এতদিন বলিনি। আমার
কাছে মনে হল কেউ না কেউ
তোকে বলবেই। খবর
নিয়ে জানলাম কেউ বলেনি।
আজকে হঠাৎ মনে হল তোর
কাছ থেকে ব্যাপারটা লুকানো উচিৎ
হচ্ছে না। আমি মূলত
এই কথাটা বলার জন্যই তোকে ফোন
দিয়েছি
--বিয়ে কখন ঠিক হয়েছে?' মাহিন
কোনভাবে নিজেকে সামলে নেয়।
--মাস খানেক হল
--বিয়ে হবে কবে?
--এই শুক্রবার
--ও আচ্ছা,ভালই তো। মেয়েদের
বিয়ে তাড়াতাড়ি হয়ে যাওয়াই ভাল
মাহিন এক রকম নির্লিপ্ততার ভাব
দেখায়। তার
ভেতরটা যে ফেটে যাচ্ছে তাপৃথাকে বুঝতে
দিতে চায়
না।
--তুই কি খুব কষ্ট পেয়েছিস
কথাটা শুনে?
--নাতো,একটা মেয়ের পরিণত
বয়সে বিয়ে হবে এটাই তো স্বাভাবিক।
এতে কষ্ট পাওয়ারকি আছে?
--তুই সত্যিই কষ্ট পাসনি!!' পৃথা খুব
অবাক হয়।
--না। আমার
কথা শুনে কি মনে হচ্ছে আমি কষ্ট
পাচ্ছি?
--কি জানি!আমি অতকিছু বুঝি না!
কিন্তু তুইতো দুদিন আগেও
আনিতা ছাড়া কিছু বুঝতি না। আর এ
কারণে তুই কষ্ট
পাবি ভেবে তোকে কথাটা বলতে সাহসে
কুলাচ্ছিল
না। এখনতো মনে হচ্ছে কথাটা আরও
আগেই বলে ফেলা ভাল ছিল।
তাহলে আমি নিজে কিছুটা হালকা
হতে পারতাম
--তুইযে পরিমাণ মোটা,
তাতে ইহকালে হালকা হতে পারবি
বলে আমার বিশ্বাস হয়না' মাহিন
রসিকতা করে পরিস্থিতি
স্বাভাবিক করার
চেষ্টা করে।
--তুই কষ্ট পাসনি শুনে খুব অবাক হচ্ছি
পৃথা অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলল।
অন্য সময়
হলে পৃথা বলত, জুতার বাড়ি খাবি
কিন্তু সে এখন
রসিকতা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না।
তার মাথায় অবিশ্বাস।
--অবাক হওয়ার কিছু নেই। মানুষের
মন যে কোন সময়
বদলাতে পারে। আনিতার
বিয়ে হয়ে যাচ্ছে একদিক
দিয়ে ভালই হয়েছে। আমি এখন
চাইলেই আরেকটা প্রেম করতে পারব।
--মাহিন!! তুই
তো এমন ছিলি না!!
--ছিলাম না তো কি হয়েছে, এখন
হয়েছি।এখন আমি স্বাধীন।
আগে যেগুলো করিনি এখন
সেগুলো সব করতে পারবো। দশ
বারটা প্রেম করবো, একবার
একটা মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে যাব।
মাঝে মাঝে বাসা খালি থাকলে
একবার একজনকে বাসায়
ডাকব, ফুর্তি করবো। সমস্যা কি?'
--তুই কি এসব মন
থেকে বলছিস!!
--মন থেকে না বলার
কি আছে?যেটা সত্যি সেটাই বলছি
--ছি; তুই আমার ফ্রেন্ড
এটা আমার ভাবতেও
ঘেন্না লাগছে। আমি তোকে অনেক
ভাল ভাবতাম। এখন
মনে হচ্ছে আনিতা তোকে ছেড়ে
দিয়ে ভালই করেছে।
পৃথিবীতে আসলে কোন ছেলেকেই
বিশ্বাস করা যায় না। ছিঃ'
(৪)
পৃথা লাইন কেটে দিল। মাহিন
মোবাইলটা আরও কিছুক্ষণ
কানের
সাথে লাগিয়ে রেখে তারপর আগের
জায়গায়
রেখে দিল। তার মন এমনিতেই
খারাপ ছিল। এখন আরও
খারাপ হয়ে গেছে। ভয়ংকর
খারাপ। তার খুব কান্না পাচ্ছে।
কারন আজ বসন্ত এই বসন্তের এই
দিনেই যে আনিতার দর্শন পায়
মাহিন...... তাই
ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কাঁদতে।
কিন্তু সে কাঁদবে না।
কারণ আনিতা এর আগে অনেকবার
সম্পর্কচ্ছেদ করার
কথা বলে এবং সম্পর্কচ্ছেদ
করে কষ্ট
দিয়ে দিয়ে তাকে শক্ত
হতে শিখিয়েছে। গত তিন মাস
সে রাতের বেলা ঘুমায়নি।
আনিতা রাতের বেলা ফোন করত
বলে সে শুধু মাত্র আনিতার ফোনের
অপেক্ষায় রাত
জেগেছে এবং যথারীতি দিনের
বেলা ঘুমিয়ে কাটিয়েছে।
প্রতি রাতের মত আজকে রাতেও
তার মনে হয়েছে যে আনিতা ফোন
দিবে। পৃথা যখন ফোন দিল
তখন সে ভেবেছিল আনিতা ফোন
দিয়েছে। কিন্তু না,
আনিতা ফোন দেয়নি। আর
কখনো দিবে বলেও মনে হয় না।
কেন দিবে? তার চোখে তার হবু
স্বামী ও সংসার
নিয়ে নিশ্চই এখন অনেক রঙ্গিন
রঙ্গিন স্বপ্নের বসবাস।
ঘুমের মাঝে সে হয়তো এখন সেই
স্বপ্ন গুলোই দেখছে।
মাহিন আবার
জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।
চাঁদের আলোয়
সবকিছু এখনো চকচক করছে, ঠিক
মাহিনের
চোখে জমে থাকা দু'ফোটা পানির
মত। চাঁদের আলোর
তীব্রতা আগের মতই। চাঁদের
আলো যেমন কমে না,
তেমনি মাহিনের চোখের পানিও
ঝরে না। সে চাঁদের
দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টিতে।
হঠাৎ অবাক
হয়ে সে লক্ষ
করে যে চাঁদটা তাকে আর আকৃষ্ট
করছে না।
এমনকি আশপাশের পরিবেশটাও তার
কাছে আর আগের মত
সুন্দর লাগছে না। ভয়ংকর দুঃখ
ভয়ংকর সুন্দরের
অনুভুতিকে গ্রাস করেছে। কষ্টের
মুহূর্তে সকল সৌন্দর্য
অর্থহীন হয়ে পড়ে, কোন কিছুই তখন
আর
মানুষকে সম্মোহিত করে না। কারণ
এর নাম যে নীল কষ্ট l

· ·
--------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------


....ভার্চুয়াল.. ..

রনির বিকেলে ঘুমানো প্রতিদিনের একটা বদ
অভ্যাস । যদিও এই বদ অভ্যাসটা ওর লাইফের
সবচেয়ে ইয়জয়এবল পার্ট । কিন্তু বন্ধুবান্ধবদের
কাছে এটা নিয়ে প্রতিদিন ই অনেক বকা শুনতে হয়

তারপরও ওইদিকে ওর বেখেয়ালিপনা ।
পৃথিবী বরবাদ হয়ে গেলেও কোন আপত্তি নাই ।
তবে যদি কোন কারনে ঘুমের ব্যাঘাত
ঘটে তাহলে আর রক্ষা নাই ।

আজ বিকেলের ঘুমটা মামুনের ফোনে হারাম
হয়ে যায় ।
-ওই বেটা কল করছস কেন ?
-দোস্ত একটু দরকার ছিল যে ।
-হারামযাদা আমি এই টাইমে ঘুমাই জানিস না ?
-দূর । চেতছ কেন ? আমি আজ তোদের বাসায়
আসতাছি ।
-তো এই কথা সন্ধ্যার পরে কল দিয়া বলতি ।
-আরে মামা সরি আর ভূল হইব না ।
-ওকে, কখন আসবি ?
-গাড়িতে উঠলাম মাত্র
তবে ২ঘন্টা ভেতরে পৌছে যাব ।
-সরাসরি বাসায় এসে পড়িস । আমি এখন ঘুমালাম
। বাই
-শোন দোস্ত শোন . . . . .

ততক্ষনে রনি লাইনটা কেটে দিয়েছে । মামুন আর
কল দেওয়ার চেষ্টাও করেনা । কারন এই টাইমে কল
করে এমনিতেই ডিস্টার্ব করেছে রনিকে । এখন
আবার ডিস্টার্ব করলে ওকে আবার কুমিল্লা ব্যাক
করতে হবে । আজ একটা দরকারে মামুনের
ঢাকা আসা । ঢাকায় ওর কোন আত্মীয়-স্বজন
থাকে না । তাই রনিদের বাসায় উঠা ।
রনি কুমিল্লা থেকে এসএসসি পাস করার পর
ঢাকা ওদের ফ্যামিলি সহ এসে পড়েছে ।
সন্ধ্যার মামুন রনিদের বাসায় পৌচ্ছাল । রনির
আম্মুকে সালাম দিয়ে রনির রুমের দিকে গিয়ে একটু
অবাক হলো ।
-সে কিরে তুই এখনও ঘুমাচ্ছিস ?
-আরে গাধা না । শুয়ে আছি ঘুমাই না ।
-এত শুয়ে থাকলে তো মোটা হয়ে যাবি । আর তখন
কোন মেয়েকেই পটাতে পারবি না ।
-দূর চিকু ছেলেরা মেয়েদের চোখে পড়ে না । তাই
একটু মোটা হইতেছি ।
-হেহেহে ঠিক বলছিস । তাই তো আমি এখনও
সিঙ্গেল । মিঙ্গেল হইতে পারলাম না ।
-আচ্ছা এইসব পরে শোনা যাবে । চল ফ্রেস
হয়ে আসি ।
-চল ।

রাত ১০টা বাজে । ওরা ২জন
খেয়ে একসাথে বিছানায় শুতে গেলো । ২জন
কথা বলতে বলতে ফেবুতে লগইন করল । রনির
ফ্রেন্ডলিষ্টে মেয়েদের ছড়াছড়ি । তাই মামুন
প্রশ্ন করশ. . .
-কিরে দোস্ত এত্ত মেয়ে কেন ?
-হুম ফেবুতে লগইন করেই তো মেয়েদের
সাথে চ্যাটিং করি । তাই ছেলেদের তেমন একসেপ্ট
করি না এবং এড ও করিনা ।
-শালা তুই একটা জিনিস ।
-হু আজ বুঝলি ?
-হুম । অনেক দিনের ইচ্ছা ঢাকার মেয়েদের
সাথে প্রেম করব । কিন্তু আমার কপালে তো প্রেম
শব্দটা অমাবর্ষা চাদের মত রে ।
-ওহ । এই কথা । আগে বলবি না।
-আগে বললে কি হইত ?
-দাড়া ওয়েট. . . .

(কিছুক্ষন পর)
এইযে অনামিকা নামের মেয়েটাকে দেখছিস না ? এড
করে নে । দেখতে সুন্দর আছে ।
-ওকে. . .বাট একসেপ্ট করবে তো ?
-আরে বেটা দে তো । এড দিয়া ওরে একটা মেসেজ
দিস ।
-আচ্ছা ঠিক আছে রে ।
মামুন অনামিকাকে রিকু. দিয়ে সাথে একটা ম্যাসেজ
দিল "একসেপ্ট না করলে খুব কষ্ট পাব"
প্রথমে অনামিকা একসেপ্ট করতে না চাইলেও
কিছুক্ষন পরে কি মনে করে যেনো একসেপ্ট
করে নিলো ।
-হাই ।
-জ্বি
-আপনার নামটা খুব সুন্দর ।
-হুম অনেক আগে থেকেই জানি ।
-খুব রেগে আছেন নাকি ?
-অপরিচিতদের সাথে রাগ করি না ।
-তাহলে পরিচিত হয়ে নেই ?
-ইচ্ছা নাই ।
-ইচ্ছা আছে ।
তবে আপনি ইচ্ছাটাকে বেধে রেখেছেন ।
-মানে ?
-ইচ্ছা না থাকলে কি রিকু একসেপ্ট করতেন ?
মেসেজ সিন হয় তবে ও পাশ থেকে ঐ দিন আর
রিপ্লাই আসে না । কিন্তু মামুন প্রতিদিন একটার
পর একটা মেসেজ দিয়েই যেত । অনামিকা প্রথম
প্রথম বিরক্ত হলেও কিছুদিন পরে মামুনের
সাথে চ্যাট করা শুরু করে দিলো ।

এভাবে প্রতিদিন মামুন অনামিকার
সাথে চ্যাটিং করত । কিছু দিনের মধ্যে ওদের
ফ্রেন্ডশীপ গভীর থেকে গভীর হতে থাকে । ফোন
নাম্বার দেওয়া নেওয়া । মাঝে মাঝে ইনবক্সে পিক
শেয়ারিং। সারাদিন চ্যাটিং আর রাত
১২টা বাজলেই ফোনের এপাশ ওপাশ ফিসফিস ।
এতদিনে দুজনেরই দুর্বলতা খুব বেড়ে গেছে । কিন্তু
কেউ কাওকে বলার বিন্দু মাত্র সাহস পাচ্ছেনা ।
অনামিকা ওয়েট করতেছে কবে মামুন নিজ থেকেই
সব কিছু বলবে । আর এটাই স্বাভাবিক । কারন
মেয়েরা সব কথা বলতে পারেনা ।

...মামুন কিছুতেই সাহস যোগাতে পাড়ছে না ।
কি করে যে অনামিকাকে সব কথা খুলে বলবে ।
পরে তো ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট হওয়ার ও একটা ভয়
থাকে । তারচেয়ে না বলাই ভাল । কিন্তু পরের দিন
সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে ফেবু লগইন করতেই
ওর মনের অবস্হা মাত্রত্রিক্ত খারাপ হয়ে যায় ।
অনামিকার রিলেশনশীপ স্ট্যাটাস "সিঙ্গেল"
থেকে চ্যান্ঞ্জ হয়ে "ইন আ রিলেশনশীপ"
হয়ে গেছে ।
তাই ঐ দিন বিকেল বেলায় রনিকে কল করে মামুন ।
রনি বিরক্তের ছাপ নিয়ে কল পিক করে । কিন্তু
মামুনের সব কথা শুনে ও হাসতে হাসতে শেষ ।
-দূর গাধা । ভালবাসিস তো বলতে প্রবলেম কি ?
এখন ঠ্যালা সামলাও ।
-বাজে বকিস না । কি করতে হবে সেটা বল ।
-কি করবি মানে । ওকে কল করে সব খুলে বল ।
-যদি ফ্রেন্ডশীপ নষ্ট হয়ে যায় ?
-হলে হওক । তুইতো ওকে আর ফ্রেন্ড ভাবিস না ।
তারচেয়ে বলে দে কষ্ট টাও কম পাবি ।
-ওকে । তাহলে আমি ওকে এখনি কল দিচ্ছি !
-হুম গাধা দে. . . .

৫মিনিট পরে অনামিকাকে ফোন দেয় মামুন ।
-হ্যালো ।
-তুমি এটা করতে পারলা ?
-কেন কি করছি আমি ?
-তুমি কাকে ভালবাস ?
-কেনো আমার বি এফ কে !
-ওর নাম কি ?
-জান !
-দুষ্টামি করবা না । সত্যি করে বলো !
-উহু । বলতে পারব না
-না তোমাকে বলতেই হবে ।
-কেনো বলব ?
-কারন আমি তোমাকে ভালবাসি।
-
-কি কথা বলো না কেন ?
-
-কিছু একটা বলো ।
-৫মিনিট পরে ফেবুতে আসো ।
অনামিকা এই ছোট্ট কথা বলেই লাইনটা কেটে দিল
। ঠিক ৫মিনিট পরে মামুন মন খারাপ করে ফেবু
লগইন করলো । লগইন করেই মামুন টাস্কিত ।
"অনামিকা চৌধুরী ইন আ রিলেশনশীপ উইথ
মামুন রশীদ"
তখন মামুন অনামিকাকে মেসেজ
করতে গিয়ে দেখে ইনবক্সে অনামিকার মেসেজ
"গাধা একটা এই ছোট্ট কথাটা বলতে এতদিন
লাগে ? আমার আর এই পেয়ে না পাওয়ার
অপেক্ষা সহ্য হচ্ছিল না । তাই আজ সকালে ছোট্ট
নাটক টুকু করছিলাম"
তখন মামুন নিজে নিজেই
হাসতে হাসতে বলে আসলেই আমি একটা "গাধা"
সত্যিই অনেক বড় একটা "গাধা" ।



--------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------


**ফেরত আসা চিঠি**



এক পা দু পা করে জীবনের
অনেকগুলা সময়
পাড়ি দিয়ে এসেছি আর এই একটু একটু
করে আসা জীবনের অতীত
দিনগুলিতে তুইও অতীত হয়ে আছিস।
চলার পথে অনেক খুঁজেছি তোকে।
কিন্তু
যে আড়ালে লুকিয়ে থাকে তাকে খুঁজে পাবে কে বল?
মনে আছে স্কুল এর প্রথম দিনে তোর
সাথেই কথা বলেছিলাম।তুই শেষ
ব্রেঞ্চের একটা কোণে বসে ছিলি।
আর সেই থেকেই তোর সাথে আমার
বন্ধুত্ব।যেদিন তুই
পড়া পারতিনা সেদিন
আমি পড়া পারলেও স্যার
কে বলতাম পড়া শিখিনি,
পাচে তোকে স্যার মারবেন, আর
আমি মার না খেয়ে বেঁছে যাব।এত
স্বার্থপর ছিলাম না রে।যেইদিন
আমি মায়ের বকা শুনে ভাত
না খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম সেদিন
তুই নিজেই আমায় ঘুম
থেকে উঠিয়ে খাওয়াতি।আমার
জীবনের প্রত্যেকটা উঁচু নিচু
পথে আমি তোকে পেয়েছি।কিন্তু
আজ কেন তুই আমার অতীত
হয়ে আড়ালে লুখিয়ে আছিস।আজ
কেন তোকে খুঁজার হাজার
চেষ্টা করেও আমি ব্যার্থ।
মাঝে মাঝে তোর উপর রাগ হয়।কেন
জানিস?কারন আগে যখন তুই আমায়
খুঁজে পেতিনা তখন
আমি নিজে থেকে তোর
কাছে ধরা দিতাম,তবে আজ কেন
তোকে আমার এত খুঁজতে হবে?খুব
ইচ্ছে হয় তোকে খুঁজতে তর
দেশে চলে যাই।আবার
নিজেকে সামলাই।কেন না,
আমি যদি তোকে খুঁজতে যেয়ে হারিয়ে যাই
তাহলে এই অতীতটুকু যে চির দিনের
জন্য অতীত হয়ে রবে, এই
ভাবনাগুলো আমায় যেতে দেয়না।
তাই বলে তুই আসতে পারিস না?
জানিস তুই তোর
বলা একটা প্রতিজ্ঞা রাখলি না,আমার
সাথে শুধু মিথ্যেই
বলেছিলি যে "তোর মত পাগল
বন্ধুটিকে রেখে যাবনা"।ঠিক
হয়নি রে এমন্টা,সত্যি ঠিক হয়নি।
আমি জানি তুই আসবি না,এটাই
সত্যি কারন তোদের দেশ
থেকে ফিরে আসা যায় না,তাই
আমি পরের জনমে তোর বন্ধু হব
বলে অপেক্ষায় থাকলাম।
তোর পাগল বন্ধু
(কালো ডায়রীর সাদা পাতা)

লিখা-- অসমাপ্ত উপসংহার।




--------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------



 ****অসাধারন গল্প****


গল্পটি অনেক বড় জানি হইতো পরবেন না লাইক ও দিবেন না তার পর ও পোস্ট করলাম
এই পোস্ট টি পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি...
পড়ুন না পড়লে নির্ঘাত মিস করবেন,
আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।
কথা দিচ্ছি অসাধারন একটা লিখা!!
রিং বাজছে ফোনে।“Ammu Calling…”. এই
একটা নাম্বার আমার কাছে রেড এলার্টের মতো।চায়ের
দোকানে বসে ফ্রেন্ডদের সাথে সিগারেট
টানতে টানতে আড্ডা দিচ্ছিলাম।জিসান খুব
রসিয়ে তার ভার্সিটির একটা মেয়ের বর্ননা দিচ্ছিলো।
চিৎকার করে সবাইকে থামতে বললাম।“ঐ
ব্যাটারা থাম!Ammu Calling…Ammu Calling…!!!”…
এই কোড সবারই জানা।সবাই তাড়াতাড়ি মুখ লক করলো।
জিসানকে মাস্টারলক করানো হলো।তার মুখটাই
সবথেকে বেশি চলে।সবাই চুপ করার পর ফোন রিসিভ
করলাম…
-হ্যালো আম্মু…
-কোথায় তুই?
-এইতো আম্মু।কৌশিকদের বাসায়।
-এত শব্দ কিসের?
-ঐতো আম্মু,রাস্তার পাশেই কৌশিকদের বাসা।আর
বোলোনা…গাড়ির শব্দে না ঘুমাতে ঘুমাতে কৌশিকের
ইনসোমনিয়া হয়ে গেছে।
-বাসায় ফিরবি না?
-হ্যাঁ,ফিরবো তো।
-কয়টা বাজে?
-এই তো আম্মু…উমম সাড়ে সাতটা…
-থাপ্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব।সাড়ে নয়টা বাজে।
দশটায় গেট বন্ধ করে দিব।এর
পরে আসলে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবি সারারাত।
-ঠিক আছে আম্মু।এখুনি আসছি…রাখি। …যদিও বললাম
তবুও আরো অন্তত এক ঘন্টা থাকার প্ল্যান।
-শোন…
-যতক্ষন কথা বলবা…গেট বন্ধ করার সময়ের সাথে ততক্ষন
add হবে।
-চোপ বেয়াদপ।যা বলছি সেটা শোন।
-অলরেডি ৩ মিনিট হয়ে গেছে…১০ টা ৩…
-প্রিয়তির জ্বর দুপুর থেকে…ওর জন্য
কয়েকটা নাপা এক্সট্রা নিয়ে আসিস…
-আম্মু একটু ধরো তো…
“এই দোস্তরা থাক আমি গেলাম।প্রিয়তির জ্বর…” বলেই
কারোর জবাবের অপেক্ষা না করে হাঁটা দিলাম।
-হ্যাঁ আম্মু,আমি আসতেছি…বাই।
কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কোন রিকশা পেলাম না।
অগত্যা হাঁটতে শুরু করলাম……।
অনেকদিন পর ছুটি পেয়েছি।বাসায় এসেছি গত পরশু।
অনেকদিন পর দেখছি সবকিছু।সেই চিরপরিচিত
দোকানপাঠ,রাস্তাঘাট,বাড়িঘর,মাঠ,গাছ…মানুষগুলো।­­
পরিচিত যেসব মানুষগুলোর
সাথে কখনো তেমনভাবে কথাবার্তাও হয়নি তাদের
সাথে কথা বলতেও ভালো লাগে।
সবকিছু আমার একান্ত আপন।আমার নিজের শহর।
বন্ধু,আত্মীয়-স্বজন,আব্বু-আম্মু,আর……প্রিয়তি।আমার
আদরের ছোট্ট বোন।আর তার মুখের টিয়া পাখির মত
সুরে “ভাইয়ামনি” ডাক।
প্রিয়তি…।
আমার জগৎটাকে আমি খুব সহজেই দুই ভাগে ভাগ
করে ফেলতে পারি।একভাগে প্রিয়তি;
অন্যভাগে বাকি সব।প্রিয়তির বয়স ৭।ক্লাস টু’তে পড়ে।
চঞ্চলতার কোন ইভেন্ট
অলিম্পিকে থাকলে অনায়াসে সে বাংলাদেশের
হয়ে প্রথম স্বর্ণপদকটা এনে দিত।তার ক্ষুদ্র
মস্তিষ্কে সবসময় একসাথে কমপক্ষে ১০ টি বিষয় কাজ
করে।তাই সে কোনটাতেই স্থির হতে পারেনা।
আমাদের কলোনীর সবচেয়ে কিউট বাচ্চা সে।নিজের
ছোটবোন বলে বলছি না।সবাই ওকে অনেক আদর করে।
কিন্তু little princess কারো আদরই সহ্য করতে পারেননা।
কেও তাকে একটু টাচ করলেই চিৎকার
করে কান্নাকাটি শুরু করে।এমনকি সে আব্বুর কাছেও
কখনো যেতে চায় না।প্রতিটি ব্যাপারে তার অনেক
strong opinion. একবার যেটা বলবে সেটাই।
বাসায় পৌঁছে কলিংবেল বাজাতেই টিয়াপাখির
চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেলাম।“Busy বিল্লি”
“Busy বিল্লি”।
কোনো এক ক্লান্ত দুপুরে ঝিমাতে ঝিমাতে 9XM
মিউজিক চ্যানেলটা দেখছিলাম।পাশে বসে ছিল
প্রিয়তি।টিভির দিকে অনেক্ষন তাকিয়ে থেকে বেশ
কিছুক্ষন
ভেবে সে ঘোষনা করলো আমি নাকি দেখতে কার্টুন
“ভিগি বিল্লি” র মতো।“ভিগি বিল্লি”
টার্মটা কোনো এক কারনে তার
কাছে মনে হয়েছে “বিজি বিল্লি”।
অনেক চেষ্টা করেছি তাকে বোঝাতে পারলাম
না যে আমি দেখতে ওরকম না আর word
টা “ভিগি বিল্লি”।
কিন্তু সে মানতে নারাজ।আগেই বলেছি সব বিষয়ে তার
opinion অনেক strong. তারপর থেকেই আমি তার “Busy
বিল্লি”।
নেহায়েৎ তার মনে গভীর ভাবের উদয় না হলে আজকাল
আমাকে “ভাইয়ামনি” বলে ডাকেনা।
যা হোক,বাসার গেট খোলা হলো।খোলার সাথে সাথেই
দেখি টিয়াপাখি দুই হাত উঁচু করে চোখ বন্ধ
করে লাফাচ্ছে।অর্থ্যাৎ “কোলে নাও”।
কোলে তুলে নিতেই ছোট্ট ছোট্ট হাত দিয়ে শক্ত
করে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো।শরীর পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে।
তারপরও অস্থিরতার শেষ নেই।আম্মু দেখি পিছন পিছন
ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে ছুটছে।
-খেয়ে নে মা,আর জ্বালাস না…আম্মু বলল।
-নাআআআ…বলে চিৎকার করে আমাকে আরো শক্ত
করে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ লুকালো।
আমি আম্মুকে ইশারা করলাম একটা।
-আম্মু কি ভাত?
-এইতো দুধ ভাত।
-আম্মু দুষ্টিপাখিরা কি খায় যেন?
-দুষ্টিপাখিরা তো দুধভাত খায়।
-ও…আমাদের বাসায় তো কোনো দুষ্টিপাখি নেই।
তুমি এক কাজ করো…তাসিন বাবুকে (কাজিন)
খাইয়ে দিও ঐটা।তাসিন বাবু
দুষ্টিপাখি হয়ে যাবে তাহলে।
-নাআ…আমি দুষ্টিপাখি…’ আমার কাঁধে মুখ
লুকিয়ে রেখেই বললো।
-তাহলে খেয়ে নাও বাবু।
-না…খাবোনা…।
আহ্লাদ করে ফুঁপিয়ে বললো।
বুঝলাম জ্বরে রুচি হারিয়েছে।পকেট
থেকে ক্যাডবেরি চকলেট বের করে বললাম “আম্মু
ক্যাডবেরিটা তাহলে তাসিন বাবুকে দিয়ে দিও।“
এবার কাজ হলো।ক্যাডবেরীর লোভে খেতে চাইল ভাত।
কিন্তু আম্মুর হাতে খাবেনা।আমার হাতে খাবে।
তাকে কোলে করে বসিয়ে খাওয়াতে লাগলাম।কিছুক্ষন
“টম এন্ড জেরি”র গল্প করলো।তারপর
কি মনে হলো সিদ্ধান্ত নিল সে নিজ হাতে খাবে।
কি আর করা…ছেড়ে দিলাম তার হাতেই।যা খেল তার
তিনগুন ছিটালো।নাকে মুখে দুধভাত মাখিয়ে দাঁত বের
করে যখন আমার কাছে এসে বলল “খাওয়া শেষ” তখন
তাকে দেখতে লাগছে একটা বিড়ালের মত।
বিড়ালের মুখ ধুইয়ে দিয়ে বিছানায় নিয়ে গেলাম
কোলে করে।ওষুধ খাওয়াতে গিয়ে ভাত খাওয়ানোর
তিনগুন পেইন নিতে হলো।তার “মিস্টার
পান্ডু” (টেডি বিয়ার) কে খুঁজে পেতে আরো কিছুক্ষন
সময় ব্যয় হলো।অবশেষে little princess ঘুমানোর জন্য
রেডি হলেন মিস্টার পান্ডুকে কোলের মধ্যে নিয়ে।
তখনো গায়ে অনেক জ্বর।মাথায় হাত বুলিয়ে আদর
করে দিচ্ছি।বিড়ালের মত আরো কাছে সরে এলো।
আমি ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করেই যাচ্ছি।কিন্তু সে শুধু
ছটফট করে।বেশ কিছুক্ষন পর নিজের ডান হাতের
বুড়ো আঙ্গুল মুখে পুরে নিল।ঘুমানোর পুর্বাভাস।মাথার
চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলাম।আস্তে আস্তে ওর
শ্বাস-প্রশ্বাস ভারী হয়ে এলো।ঘুমিয়ে পড়লো আমার
দুষ্টিপাখি।আমি সারারাত জেগে থাকলাম অর পাশে।
শেষ রাতের দিকে ওর জ্বর নেমে এলো।
কিছুদিন পর।
রুমের দরজা ঠেলে দিয়ে বারান্দায় বসে সিগারেট
টানছি।কখন যে পিচ্চিটা গুটুর গুটুর
করে ঢুকে পড়েছে খেয়াল করিনি।আমার
হাতে সিগারেট দেখে সে কিছুক্ষন চোখ বড় বড়
করে তাকিয়ে রইলো।তারপরেই তারস্বরে চিৎকার
করতে যাবে, “আম…ম…” আম্মু ডাকটা ডেকে শেষ করার
আগেই মুখ চেপে ধরলাম।কিছুক্ষন অনেক জোরাজুরি করল।
অবশেষে না পেরে হাল ছেড়ে দিলো।
আমি তাড়াতাড়ি টেবিল এর ড্রয়ার
থেকে ক্যাডবেরী বের করে দিলাম।এসব
পরিস্থিতি সামাল দিতে রাখা লাগে।কিন্তু
বোঝা গেল ঘুষ যথেষ্ট না।এখন তার
সাথে ছাদে গিয়ে তার সাহেবদের কে খাওয়াতে হবে ।
সাহেব অর্থ্যাৎ তার কবুতররা।উপায় নেই।যেতে হলো।
আমি আর ও মিলে খাওয়াতে লাগলাম।বোঝা গেল
কবুতরগুলো তাদের এই পিচ্চি মালকিনকে ভালোই চিনে।
ও ওদেরকে ছুটে ছুটে তাড়া করছে।ধরছে।কবুতরগুলো কিছু
মনে করছে না।খাওয়ানো শেষে দুষ্টিপাখির
সাথে কিছুক্ষন খেলা করতে হলো।শেষ বিকালের
দিকে ওকে কোলে করে ছাদে দাঁড়িয়ে আছি।অনেক্ষন
বকবক করে এখন তিনি রেস্ট নিচ্ছেন।
-প্রিয়তি বাবু…
-হুম…
-তোমার ক্লাস পজিশান কত বাবু?
প্রশস্ত একটা হাসি দিয়ে বলল “ফার্স্ট”।
গাল টিপে আদর করে দিয়ে বললাম… “আমার
সোনাপাখি”।
অমনি সে ভ্রু কুঁচকে ফেললো।কিছুক্ষন
তাকিয়ে থেকে আমার মুখ খাঁমচে ধরল।
-এই এই,কি হলো ও ও…লাগছে তো…
-আমি সোনাপাখি না…দুষ্টিপাখি বল।
-আচ্ছা রে বাবা ঠিক আছে।
দুষ্টিপাখি,দুষ্টিপাখি,আমার দুষ্টিপাখি।
অবশেষে থামলো।আমি এবার মেকি মন খারাপ
করে বললাম…
-বাবু আমাকে খাঁমচে দিলা এখন কি হবে?
আমি যে ব্যাথা পাইলাম…
আমার দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষন কি যেন ভাবল।তারপর
আমার গালে চুমু দিয়ে দিলো একটা।দুষ্টিপাখি­­
টাকে বুকে চেপে ধরে আদর করে দিলাম।আমার এই
জা্নটাকে ছেড়ে দূরে ভার্সিটিতে আমি কিভাবে থাক
আমিই জানি।
সন্ধ্যায় তার মিস এসেছে।কিন্তু
সে পড়তে চাইছে না কিছুতেই।পেট
চেপে ধরে বসে আছে।আম্মু অনেক বকাবকি করছে।কিন্তু
সে পেট চেপে ধরে বসেই আছে।
আমি গিয়ে ওকে কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে এলাম।
জিজ্ঞাসা করলাম…
-বাবু কোথায় ব্যাথা করে?
-এইখানে… পেটে হাত দিয়ে দেখালো।
চকলেট বের
করে বললাম…”এইটা খাইলে কি প্রিয়তি বাবুর
ব্যাথা ঠিক হবে?”
কিন্তু ও চকলেটও খেতে চাইলো না।
অবশষে আমি মিসকে চলে যেতে বললাম।ওকে আমিই
পড়িয়ে নিব।কোন পর্যন্ত পড়ানো হয়েছে দেখে নিলাম।
কিন্তু রাত্রে ও বমি করলো।বেশ কাহিল হয়ে পড়লো।
আমরা কিছুই বুঝতে পারলাম না কেন হচ্ছে।অবশ্য ও বেশ
তাড়াতাড়িই ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালবেলাতেই স্বাভাবিক।ছুটির দিন।স্বভাবসুলভ
দুষ্টামিতে বাসা মাথায় করে রাখলো।
ঈদটা সেবার অনেক ভালো কাটলো।দুষ্টিপাখিকে বড়
একটা টেডি বিয়ার ও কিনে দিলাম।ছুটি শেষ হয়ে এল।
বুকে পাথর চেপে little princess টা কে বাসায়
রেখে ভার্সিটিতে চলে এলাম।
ল্যাব,assignment,class test এর চাপে যখন জর্জরিত
এরকম একটা দিনে আম্মু হঠাৎ ফোন দিয়ে বলল…
-“বাপ কালকে তুই বাসায় আসতে পারবি?”
আম্মুর কন্ঠে কি যেন ছিল।আমি ভয় পেয়ে গেলাম…
-কি হয়েছে আম্মু?
-তেমন কিছু না রে…তোর আব্বু একটু অসুস্থ।কাল
তো বৃহস্পতিবার।তুই চলে আয়।শনিবারে চলে যাস
আবার।
-আব্বুর কি হয়েছে আম্মু সত্যি করে বলো।
আব্বুকে ফোনটা দাও।
-নে কথা বল।
আম্মু আব্বুর হাতে ফোনটা দিলেন।
-হ্যাঁ বাবা,তেমন কিছু হয়নি রে।একটু অসুস্থ হয়ে পড়লাম।
তুই সেই কবে গেছিস।বাসা থেকে ঘুরে যা একটু।
-আব্বু তুমি ঠিক আছো তো?শরীর এখন কেমন?
-আমি ঠিক আছি রে বাবা।টেনশান করিস না।তুই
চলে আয়।
-ঠিক আছে আব্বু।
-রাখি তাহলে?
-ঠিক আছে আব্বু।আমি চলে আসবো।
আব্বুর একবার হার্ট-এটাক হয়েছে।না জানি আবার
কি সমস্যা হল।আমি পরের দিনের
অপেক্ষা না করে সেদিনই চলে গেলাম।
বাসায় যখন পৌছালাম তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
কলিংবেল চাপলাম।“বিজি বিল্লি” টাইপ
কোনো চিৎকার শোনা গেল না।কয়েকবার কলিংবেল
চাপার পরেও না।বাচ্চা হলেও বাসার
পরিস্থিতিটা হয়ত বুঝতে পারছে প্রিয়তি।আব্বুকে ভয়
পেলেও অনেক ভালোবাসে সে।তার ড্রয়িং খাতায়
সে আমার পর আব্বুর ছবিই সবচেয়ে বেশি এঁকেছে।গেট
খুললেন ফুপি।বাবার খবর পেয়ে মনে হয় সবাই এসেছেন।
বাসায় ঢুকে অবশ্য ড্রয়িং রুমে ফুফা বাদে আর
কাউকে দেখতে পেলাম না।ব্যাগ রেখে আব্বুর
রুমে গিয়ে দেখি আব্বু নেই।বারান্দায়
গিয়ে দেখি চেয়ারে বসে আছেন।
আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালেন।
-এসে গেছিস বাবা…
-হ্যাঁ বাবা,তুমি ভালো আছো?
-হ্যাঁ রে…ভালো আছি।তুই কেমন ছিলি?
আসতে সমস্যা হয়নি তো কোনো?
-না আব্বু।আমার কথা বাদ দাও।তোমার কি হয়েছিল
সেটা বলো।
বাবা চুপ করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন।
-আর প্রিয়তি আম্মু এরা কই?বাইরে গেছে নাকি?
দেখলাম না তো।
বাবা চুপ করেই আছেন।
-কি হলো আব্বু,কথা বলোনা যে?
আব্বু বললেন…
-ঐযে…প্রিয়তি একটু অসুস্থ তো।ওকে নিয়ে একটু
হসপিটালে গেছে।
-মানে?????প্রিয়তির কি হয়েছে আব্বু?
আস্তে আস্তে আমার কাছে সবকিছু পরিস্কার
হতে থাকে।আসলে আব্বুর কিছু হয়নি।প্রিয়তির কিছু
একটা হয়েছে।
-কি হয়েছে আব্বু বলো…চুপ করে আছো কেন?
কোনো accident হয়েছে?আমাকে বলো…
-না রে বাবা…তেমন কিছুই না।একটু সর্দি জ্বর।
-আব্বু আমার কাছ থেকে লুকাবা না।বলো আমাদের
প্রিয়তির কি হয়েছে?
আব্বু চুপ করে থাকেন কিছুক্ষন।তারপর দীর্ঘশ্বাস
ছেড়ে বলেন…
-বাবা শোন।প্রিয়তি একটু sick.
-“আব্বু তুমি acting করবা না।বলো তুমি আমার
প্রিয়তির কি হইছে…” অনিয়ন্ত্রিত ভাবে আমার চোখ
বেয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু নেমে আসে।
আব্বু আবার কিছুক্ষন চুপ করে থাকেন।বেশ কিছু
দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলেন…
-শোন…শক্ত হ এ্কটু।প্রিয়তির লিউকেমিয়া হয়েছে।নতুন
ব্লাড সেল ফর্ম করছে না।
আমি হা করে আব্বুর দিকে চেয়ে থাকি।
-“আব্বু প্রিয়তি একটা বাচ্চা মেয়ে……”
-“শোন পাগল…এত সিরিয়াস কিছু না।ডক্টর বলেছেন
কিছুদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
আমি চিৎকার করে বলি…”আমাকে শিখাবানা আব্বু।
আমি জানি লিউকেমিয়া কি…”
আব্বু আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
আমি কাঁদতে কাঁদতে বলি… “আব্বু ভুল হইছে।
ডাক্তাররা অনেক ভুল করে অনেক সময়
তুমি জানোনা আব্বু।ওরা ভুল করেছে।প্রিয়তির কিছু
হয়নি।ও তো একটা বাচ্চা মেয়ে…”
আর কিছু বলতে পারিনা।গলায় আটকে যায় সবকিছু।
আমার জগৎ হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যায়।
বাবা অনেক sensible মানুষ।
আমাকে শকগুলা আস্তে আস্তে দিতে থাকেন।
লিউকেমিয়ার প্রতিকার সম্ভব।একুশ দিন পর পর রক্ত
পরিবর্তন করা লাগে।কিন্তু প্রিয়তির অনেক
দেরি হয়ে গেছে।ওর blood cell গুলা খুব
তাড়াতাড়ি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।Afford করা সম্ভব
হচ্ছেনা।যার অর্থ আমার প্রিয়তির হাতে আর বেশিদিন
সময় নাই।
আমার বিশ্বাস হয় না।কোন ভাবেই না।
এইতো সেদিনকার বাচ্চা।দোলনায় শুয়ে হাত
নেড়ে নেড়ে খেলা করতো।আমার কোলে আসলে চোখ বড়
বড় করে আমাকে দেখতো।যাই দেখত তাই
মুখে দিতে চাইত।আমার কোলে এসেই
চশমা ধরে টানাটানি শুরু করত।যাকে এখনো পর্যন্ত
কোলে করে বাথরুমে দিয়ে না আসলে সকালে ঘুম
ভাঙ্গে না।যে এখনো অরেঞ্জ ফ্লেভারের টুথপেস্ট
খেয়ে ফেলে…
আমি আর ভাবতে পারি না…
আব্বু আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।কেবিনে ঢোকার
আগে নিজেকে পুরোপুরি শান্ত করে ফেলি।
ঢুকে দেখি আমার দুষ্টিপাখি শুয়ে আছে…বিছানায়
সাদা চাদর পাতা।তার উপর ছোট্ট একটা শরীর।
মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে কেমন।ছোট্ট
শরীরটা শুকিয়ে আরো ছোট্ট হয়ে গেছে।চোখটা তীক্ষ।
কিন্তু আমাকে দেখেই সেই আগের ভঙ্গিমায় ফিক
করে হাসিটা দিল।আমার বুকের ভিতর চিনচিন
করে একটা ব্যাথা বেজে উঠলো।
চোখে অস্থিরতা টা এখনো রয়েছে।কিন্তু হাত-
পা নাড়ানোর ক্ষমতা কমে গেছে।আমার
দিকে তাকিয়ে বললো…
-“বিজি বিল্লি”
ওর ছোট্ট মুখটা ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে দিলাম।ওর
মাথার কাছে বসলাম।আস্তে আস্তে গুটুর গুটুর করে আমার
সাথে গল্প করতে লাগলো।
মামনি যে কত দুষ্টু হয়েছে।হস্পিটালে তার মিস্টার
পান্ডুকে আনতে ভুলে গেছে।তাই তার ঘুম হয় না।
সেকথা বলতেও ভুললো না।
আমি আমার দুষ্টিপাখিটার
সারা মুখে আলতো করে হাত বুলিয়ে দেই।
-বাবু তোমার কিছু হবেনা।তুমি আমার দুষ্টিপাখি না?
দুষ্টিপাখিদের কি কিছু হয় নাকি?কিচ্ছু হয়না।
আমার বাবু ফিক করে হাসি দিয়ে বলল…
-আম্মু আমাকে বলেছে ডক্টর আঙ্কেলের বাসায় আসার
পর ডক্টর আঙ্কেল আমাকে অনেক পছন্দ করেছেন।তাই
যেতে দিচ্ছেনা।
-হ্যাঁ তাইতো সোনা।কিন্তু আমি যে তোমাকে ডক্টর
আঙ্কেলের থেকেও বেশি পছন্দ করি।
আমি তোমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যাবো।
-হুম…তুমি কিন্তু অনেকদিন থাকবা এবার…তাড়াতাড়ি
চলে যাবা না…
-হুম সোনা…তোমাকে ছেড়ে কোত্থাও যাবোনা…
-আর স্কুলে দুষ্টু ইভন আমার মাথায় মেরেছে…
তুমি ওকে মেরে দিবা…
-ঠিক আছে সোনা…অনেক অনেক মেরে দিব।সাহস
তো কম না…দুষ্টিপাখির গায়ে হাত তোলে।
ও একটা হাসি দেয়।আমি ওর সারা মুখে চুমু দিয়ে দেই
আলতো করে করে।আমার
দুষ্টিপাখি আদরটা ধরতে পারে।আমার
দিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকে।
সেদিন রাতে আমি বাসায় ছিলাম।রাত্রে শুনলাম
প্রিয়তি বাবু রক্তবমি করেছে।পরদিন সারাদিন
ছাড়া ছাড়া ভাবে জ্ঞান আসলো আর গেল।
কোনো কথা বলতে পারলো না।তারপরদিন কথা বলার
অবস্থা হলো।কিন্তু অনেক
আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগলো।
ওর কাছে গেলাম।
-দুষ্টিপাখি কেমন আছো?
প্রথমে কছুক্ষন চুপ করে থাকলো।তারপর
আমাকে ডেকে বললো আম্মুকে দূরে যেতে বলো।
আম্মুকে দূরে যেতে বললাম…হয়নি,আরো দুরে।
আরো দূরে গেলো আম্মু।
প্রিয়তি আমাকে ডেকে কানে কানে বললো…
-ভাইয়ামনি শোন…
-বলো দুষ্টিপাখি।
-তুমি আর কিসারেট (সিগারেট) খাবানা।ডক্টর আঙ্কেল
বলে কিসারেট খেলে ক্যান্সার হয়।
আমি প্রচন্ড কষ্টে আমার চোখের পানি আটকাই।
-ঠিক আছে বাবু।আমি আর কক্ষনো কিসারেট খাবোনা।
-প্রমিজ?
-প্রমিজ সোনা…
-না…পিঙ্ক প্রমিজ করো…
-হ্যাঁ সোনা পিঙ্ক প্রমিজ।
-প্রমিজ না রাখলে কিন্তু তোমার
জিব্বা কালো হয়ে যাবে।
-আমি রাখবো সোনা।আমি তোমার
লক্ষী ভাইয়ামনি না?
ও কিছুক্ষন চুপ
করে থেকে দুষ্টামি হাসি দিয়ে বলে…”বিজি বিল্লি”।
আবার বলে…
-ভাইয়ামনি তুমি আমার মিস্টার
পান্ডুকে কোলে করে ঘুমাবা বলো…
আমি আমার চোখের অশ্রু বেঁধে রাখার
যুদ্ধে হেরে যাই…দু’এক ফোঁটা অশ্রু বেয়ে পড়ে…
-কেন রে সোনা?মিস্টার পান্ডু তো তোর কোল
ছাড়া ঘুমায় না…
-আমি মিস্টার পান্ডুকে বলে দিছি…ও তোমার
কোলে ঘুমাবে এখন থেকে।
-ঠিক আছে বাবু।আমি তোর মিস্টার
পান্ডুকে কোলে করে ঘুমাবো।
-আর তাসিন বাবুকে দুষ্টিপাখি বানাবা না।
আমি দুষ্টিপাখি…আম্মু বারবার তাসিন
বাবুকে দুষ্টিপাখি বানিয়ে দেয়…
বলতে বলতে আমার প্রিয়তি বাবুর চোখ থেকে মুক্তার
মতো কয়েকফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়ে।ছোট্ট পবিত্র এই
বাচ্চাটার অশ্রু সহ্য করার ক্ষমতা আমার ছিলনা।
দু’হাতে অর ছোট্ট মুখটা ধরে কপালে একটা চুমু
দিয়ে দৌড়ে চলে এলাম বাইরে।
পকেট থেকে সিগারেটের
প্যাকেটটা ছুড়ে ফেলে পা দিয়ে সজোরে রাস্তার
সাথে পিশলাম।চোখ থেকে অনবরত পানি পড়েই
যাচ্ছে…আকাশের দিকে তাকালাম…সপ্তম
আসমানে আল্লাহ বলে একজন আছেন।যিনি সকল ক্ষমতার
অধিকা্রী…তার কাছে মিনতি করে বললাম…
হে আল্লাহ।এই অবুঝ নিষ্পাপ পরীর মত
শিশুটি তো জীবনে কোনো পাপ করেনি।তবে কিসের
শাস্তি তুমি ওকে দিচ্ছ?ও তো একটা ফেরেস্তা…ছোট্ট
ফেরেস্তাটার কষ্ট যে আমি নিতে পারছিনা আর
খোদা।আমি সিগারেট খাই…নামাজ পড়িনা।অনেক
পাপ করি…তুমি ওর বদলে আমাকে তুলে নাও… কিন্তু
আমার ছোট্ট নিষ্পাপ দুষ্টিপাখিটাকে ফিরিয়ে দাও।
আমার মত পাপী বান্দার মিনতি শোনার প্রয়োজন
হয়তো আল্লাহ বোধ করেননি।……আমার
দুষ্টিপাখিটা তাই উড়ে গিয়ে আকাশের
তারা হয়ে জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে।
********************
**আমার পাশের বাসায় পরীর মত ছোট্ট
একটা বাচ্চা ছিল।অনেক অস্থির,চঞ্চল আর মিষ্টি।
বারান্দায় বসে ওর ছোটাছুটি আর
খেলা করে বেড়ানো দেখতাম আর ভাবতাম…ইশ!আমার
যদি একটা বোন থাকতো।কিছুদিন আগে মেয়েটার
লিউকেমিয়া হয়।ছোট্ট বয়সেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়।
যানিনা আল্লাহ পাহাড় সমান পাপ
করে ফেলা মানুষগুলকে রেখে কেন ফেরেশতাগুলোকে এত
আগে আগে তুলে নেন।শুনেছি আল্লাহ তার প্রিয়
বান্দাদের আগে আগে তুলে নেন নিজের কাছে।সেজন্যই
হয়তোবা হবে।তবুও আল্লাহর কাছে আমার প্রার্থনা…
আল্লাহ,অন্ধকারাচ্ছন্ন এই দুনিয়ায় ফেরেশতার মত
শিশুরাই আলোর উৎস।তুমি ফুলগুলোকে আমাদের কাছ
থেকে এত তাড়াতাড়ি তুলে নিওনা।**
[colected]



--------------*****---------------------*****---------------------******---------------*****------------



### প্রিয়তমেষু###


৯ মে তোমার জন্মদিন। দেখেছ ঠিক মনে রেখেছি। অবন্তী, একি এইটুকুতে অবাক হলে? হয়তো তেলেবেগুনে রেগে গিয়েই বলছ, ‘আজ সে আমাকে বার্থডের তারিখ শেখাচ্ছে! যত দিন একসঙ্গে ছিলাম তত দিন তো এসবের কোনো বালাই ছিল না! কখনো কি আমার জন্মদিনের প্রথম প্রহরে আমার জন্য একমুঠো গোলাপ হাতে দাঁড়িয়ে থেকেছ? শুধু ভণিতা করে বলতে;—আজকের সকালবেলার বাতাসের আছে শুধু তোমার অধিকার/আমার নিবেদন গোলাপ রজনীহীন/আজ তোমার শুভজন্মদিন। তুমি গল্প, কবিতা লিখতে। যদি বলতাম আমাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখে দিয়ো। উদাসপানে তাকিয়ে বলতে;—আগে জীবনানন্দ দাশ, টি এস ইলিয়ট পড়ো তারপর না হয় আমাকে পড়লে! বছরের পর বছর ধরে তোমাকেই বুঝতে পারিনি; আর জীবনানন্দ দাশ! তোমার মতো ছেলেদের ভালোবাসলে পাহাড়সম কষ্ট নিয়ে চলতে হয়। বাউণ্ডুলে, ভবঘুরে ছেলের জন্য ভালোবাসা নাই। যাও, ভাগো; ভুলে গেছি তোমাকে।’
চলেই গেছি। আমি হয়তো লুকোচুরি খেলার ছলে পালিয়ে আছি; কানামাছি খেলে আমার জীবন থেকে ভোঁ-দৌড় দাওনি কি তুমি! অবন্তী, ফুলার রোড আর ভিসি চত্বরের কথা মনে পড়ে তোমার? রোজ পড়ন্ত বিকেলে দেখা করতাম এখানে। সস্তা ঝালমুড়ি আর বাদামে কাটত আমাদের সময়। সপ্তান্তে কদাচিৎ তোমার প্রিয় আইসক্রিম। প্রায়ই তুমি পুরোনো ফ্রেমের চশমাটি খুলে মুগ্ধদৃষ্টিতে তাকাতে। আমার ভীষণ লজ্জা লাগত তখন। মনে খটকা লাগত; আমি তো সুদর্শন নই, তবুও মেয়েটি এত মুগ্ধ কেন!
আমাকে নিয়ে দুনিয়ার সব নালিশ ছিল তোমার।
অবন্তী, তোমার শেষ কথাটি আমার কানে বিষাক্ত তিরের মতো বিঁধে আছে—‘যেদিন আমি চলে যাব সেদিন তুমি আমার মর্মটা বুঝবে’। রোবট আর নিশাচর প্রাণীর মতো হয়ে গেছি আমি। তরতাজা মোটা হয়ে যাচ্ছি দিন দিন! ভালোবাসা আর ঘৃণা; একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এখন মুদ্রার পিঠটি পাল্টে দিয়েছ। প্রচণ্ড ঘৃণা করো আমায়, তাই না? যাই হোক একদিন তো ভালোবেসেছিলে আমায়। এতেই আমি তৃপ্ত। সন্তুষ্ট বটে।
তোমার কাজলকালো চোখের কোণে কি জল? আমাকে ভুলে গিয়ে তবুও আমার জন্য দুফোঁটা জল জমিয়ে রেখেছ? তোমার চোখের কোণে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু জল মুছে দিতে ভীষণ ইচ্ছা করছে।
এখন রবি ঠাকুরের মতো বলি, ‘অশ্রু আঁখি পরে যদি ফুটে ওঠে তব স্নাত চোখ।’

 সৃগীহতি

No comments:

Post a Comment