Wednesday 10 February 2016

এখনো সময় আছে

গল্পের নামঃ এখনো সময় আছে।
.
- দোস্ত তোর এত বছরের কষ্ট আজ সফল হয়েছে। (শান্ত)
~ মানে? (রিয়াদ)
- তুই এতদিন যে বিষয় নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করেছিস। আজ তার ফলাফল বের হয়েছে। তুই সেই বিষয়ের উপর পিএইচডি করেছিস।
~ তোর মাথা ঠিক আছে? আমি তো এমন কোনো পরীক্ষা দেই নাই।
.
- গতকাল তুই যে ব্লাড টেস্ট করিয়েছিলি। এই নে তার রিপোর্ট।

.
শান্ত রিয়াদের হাতে রিপোর্ট কার্ড দিল। রিয়াদ রিপোর্ট কার্ড খুলে অবাক হয়ে যায়। নিজ চোখে দেখেও বিশ্বাস করতে পারছে না।
.
~ দেখেছিস, তোর এতদিনের কষ্ট আজ সফল হয়েছে।
- আমার ক্যান্সার হয়েছে। আর তুই ফান করছিস? (অশ্রু চোখে বলল)
~ আজব তো! আমি ফান করলাম কোথায়? আমি তো তোর সফলতায় খুশি।
- কিসের সফলতা? আমার ক্যান্সার হয়েছে। ক্যান্সার ক্যান্সার ক্যান্সার। তুই কি বুঝিস না ক্যান্সার মানে কি? ক্যান্সার মানে মৃত্যু।
.
- আরে তুই কান্না করছিস কেন? এতো সুখের খবর। এত বছর ধরে তুই দিনরাত পরিশ্রম করে সময়মতো সিগারেট, মদ গাজা আফিং খেয়েছিস। এটা তো তারই ফল, তাই না?
.
রিয়াদ শান্তর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
.
- কিরে তুই খুশি না?
~ (নিশ্চুপ)
- শুন, এত বছর নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তুই শুনিস নায়। আজ কান্না করছিস কেন? আজ তো হাসির দিন। তোর এত বছরের কষ্টের ফল আজ তোর হাতে।
.
রিয়াদ নিশ্চুপ হয়ে আছে। এখন কি করবে তাই ভাবছে। তার পরিবারকে কিভাবে জানাবে কথাটা? সিফাকেও(স্ত্রী) কিভাবে বলবে? কথাটা সিফা জানলে মরেই যাবে।
.
রিয়াদ চোখ মুছে বলল
~ দোস্ত এই কথাটা আর কাউকে বলিস না।
- আরে বেটা সুখের খবর লুকিয়ে রাখতে নেই। আমি অলরেডি তোর পরিবারের সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি।
~ কি!
- হ্যাঁ।
.
রিয়াদ শান্তকে থাপ্পড় মেরে বাসায় দৌড় দিল। আল্লাহই জানে বাবা মা ও সিফার কি অবস্থা!
.
রিয়াদ বাসায় এসে দেখল সবাই গোমরামুখো হয়ে বসে আছে। রিয়াদের আম্মু কেঁদে কেঁদে অস্থির। রিয়াদ যেয়ে তার আম্মুর কাছে বসলো। রিয়াদের আম্মু রিয়াদকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল।
.
রিয়াদ অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে থামালো।
.
= বাবা ভেতরে যা। বউমা …… (বলতে পারল না মুখ চেপে কান্না শুরু করল।)
.
রিয়াদ ভেতরে গেল। সিফা কান্না করতে করতে ঘেমে গেছে। চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। রিয়াদ সিফার পাশে বসতেই সিফা রিয়াদকে জড়িয়ে ধরল।
.
> এমন কেন হল? এখন আমার কি হবে? আমি তো তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। (কেঁদে কেঁদে)
~ দেখ তুমি কান্না থামাও। আমার কিচ্ছু হবে না। আমি বড় বড় ডাক্তার দেখাব। (মিথ্যা সান্তনা কারণ রিপোর্টে লিখাই আছে লাস্ট স্টেজ। বাঁচানো সম্ভব না।)
.
> আমাদের বাবুটার কি হবে? ওর সাথে কে খেলা করবে? ও কাকে বাবা বলে ডাকবে? (কেঁদে কেঁদে)
.
কথাটা শুনে রিয়াদের মুখে একটু হাসি ফুটলো।
.
~ সত্যিই বলছ? আমি বাবা হতে চলেছি?
.
সিফা রিয়াদের বুকে মাথা গুজে দিয়ে কাঁদতে লাগল। রিয়াদের বুকে মোচড় দিয়ে উঠল। তার নিজের পরিবারটা সম্পূর্ণ হতেই যাচ্ছিল কিন্তু সে এই পরিবারটাকে অসম্পূর্ণ রেখে চলে যাবে। কথাটা ভাবতেই রিয়াদের চোখে বেয়ে অশ্রু পড়ে গেল।
.
> তোমাকে কত মানা করেছিলাম এসব ছেড়ে দাও। কিন্তু ছাড়লে না। পরিণামে আজ এটা হল। (কান্না জড়িত কণ্ঠে)
.
রিয়াদ সিফাকে জড়িয়ে ধরল। আজ কেন যেন রিয়াদের ইচ্ছে করছে সিফাকে জড়িয়ে রাখতে। আজ রিয়াদ বাঁচতে চাচ্ছে। আজ রিয়াদ বাঁচতে চাচ্ছে তার নবাগত সন্তানকে দেখার জন্য। আজ রিয়াদ বাঁচতে চাচ্ছে তার পরিবারের জন্য। কিন্তু ক্যান্সার নামক মরণব্যাধি রিয়াদকে বাঁচতে দিবে না।
.
আজ রিয়াদের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে? আর কেউ না‚ রিয়াদ নিজেই।
.
রিয়াদ অশ্রুজলে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। সম্পূর্ণ ঘর স্তব্ধ হয়ে আছে। মৃত্যুর আগেই যেন মরণ যন্ত্রণা তাকে মেরে ফেলছে। যে রিয়াদ প্রতি ঘন্টায় একটা সিগারেট খেত। আজ সেই রিয়াদ তিন ঘন্টা ধরে সিগারেটে হাতও দেয়নি। কিন্তু এখন মাদক থেকে দূরে থেকে কি হবে? ক্যান্সার তো হয়েই গেছে।
.
শান্ত রিয়াদের বাসায় আসলো। শান্তকে দেখে রিয়াদ বলল
~ স্যরি দোস্ত। তোকে তখন মারাটা ঠিক হয়নি।
- আরে ও কিছু না। তো এখন কেমন আছিস?
.
রিয়াদ শান্তকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলল
~ জানিস, আমি বাবা হতে চলেছি। কিন্তু আমি আমার আদরের সন্তানকে দেখতে পারব না। ওকে কোলে নিতে পারব না। ওকে আঙ্গুল ধরে হাটা শিখাতে পারব না। ওর মুখে বাবা ডাক শুনতে পারব না। ওর সাথে খেলতে পারব। এসব কিছু থেকে বঞ্চিত হওয়ার জন্য আমি নিজেই দায়ী। (কান্না জড়িত কণ্ঠে)
.
- প্লিজ দোস্ত কাদিস না। তোকে আগে কত মানা করেছিলাম। তবুও তুই কথা শুনিসনি।
~ হ্যাঁ রে তখন যদি তোদের কথা শুনতাম। তবে আজ আমি বাবা হব খবরটা শুনে আনন্দে ভাসতাম। আমার পরিবারের সাথে সুখে শান্তিতে বসবাস করার নতুন স্বপ্ন দেখতাম।
- তুই চাইলে এখনো সম্ভব।
.
~ নারে। রিপোর্টে লিখাই আছে লাস্ট স্টেজ।
- একটা কথা বলি মারবি না তো?
~ নারে মারব না। যা ইচ্ছে বল।
.
শান্ত রিয়াদ থেকে কিছুটা দূরে যেয়ে বলল, "ঐ রিপোর্টটা বানানো রিপোর্ট। তোর কিছু হয়নি। আর এসব কিছুই নাটক। শুধুমাত্র তোকে সঠিক রাস্তায় আনার জন্য।"
.
রিয়াদ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। রিয়াদ সিফার দিকে তাকালো। সিফা মিটমিট করে হাসছে। রিয়াদের মন হলো তার বুক থেকে বড় একটা পাথর নেমে গেছে।
.
সিফা রিয়াদের কাছে এসে বলল
> আমরা এসব কিছু করেছি শুধুমাত্র তোমার জন্য। প্লিজ এসব ছেড়ে দাও।
.
রিয়াদ সিফাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল। শান্ত অন্য রুমে চলে গেল।
.
রিয়াদ সিফাকে বলল
- আমি আর কখনোই মদ গাজা সিগারেটে হাত দিব না।
সিফাও জড়িয়ে ধরল।
- আচ্ছা আমাদের বাবুটার খবর কি সত্য?
সিফা রিয়াদের বুকে নিজেকে লুকিয়ে দিল। রিয়াদ বুঝতে পারল এই সাজানো ঘটনার মধ্যে বাবুর ঘটনাটাই সত্য।
.
রিয়াদ তো বেঁচে গেল। সময় থাকতে আপনিও সাবধান হয়ে যান। নিজের সন্তান পরিবার পরিজনের কথা চিন্তা করে মাদক থেকে দূরে থাকুন। নিজে দূরে থাকুন এবং অন্যদেরকেও দূরে রাখুন। আপনারও তো নৈতিক দায়িত্ব আপনার বন্ধুকে এসব থেকে দূরে রাখার।
.
ভাল থাকুন। সুস্থ্য থাকুন। অন্যকেও ভাল এবং সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন।
ধন্যবাদ

No comments:

Post a Comment